শিরোনাম
◈ টাঙ্গাইলের ছানোয়ার বছরে কফি উৎপাদন করেন ১ টন, রয়েছে অন্যান্য সবজিও ◈ পেনাল্টি ছাড়া রোনালদো থেকে মেসির গোল বেশি ◈ ইমার্জিং এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হেরে গোলো বাংলাদেশ ◈ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন  ◈ পিসিবির নতুন প্রস্তাব, ভারত নিজ দেশ থেকে আসা-যাওয়া করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি  খেলতে পারবে ◈ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে যা বলতে চেয়েছিলেন ◈ বাংলাদেশ থেকে রফতানি কমেছে, ভারত থেকে আমদানি কমেনি ◈ রাজু ভাস্কর্যে নারী প্রতিকৃতির মাথায় ‘হিজাব’, সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন ◈ শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন আসেনি ◈ মধ্যরাতে উত্তাল ঢাকা কলেজ, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:১৭ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাঙ্গাইলের ছানোয়ার বছরে কফি উৎপাদন করেন ১ টন, রয়েছে অন্যান্য সবজিও

আরমান কবীর, টাঙ্গাইল : শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে সফল কৃষকের খ্যাতি পেয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের মো. ছানোয়ার হোসেন (৫০)।  কলা, আনারস,ভূট্টা, পেঁপে, ড্রাগন ফল ও পেয়ারাসহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির পর এবার কফি চাষেও সফল হয়েছেন তিনি। গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ টন কফি উৎপাদন করছেন কফি চাষী ছানোয়ার। 

কফিসহ কমপক্ষে ১০ ধরনের ফলের চাষাবাদ হচ্ছে তার বাগানে। নিরাপদ ফল উৎপাদনে এলাকার মানুষের কাছে আদর্শ চাষীও এখন ছানোয়ার। অনেকেই গ্রামটিতে আসছেন তার কফি বাগান দেখাসহ চাষাবাদের পরামর্শও নিতে।  শুধু আদর্শ চাষী হিসেবেই স্বীকৃতি পাননি ছানোয়ার, পেয়েছেন সফল কৃষক হিসেবে রাষ্ট্রীয় বঙ্গবন্ধু কৃষি স্বর্ণপদক।

পাশাপাশি জেলার মধুপুর গড়ের উঁচু ও লাল মাটিতে আনারস,কলা,পেঁপের মত কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনাও দেখিয়েছেন তিনি। যার ধারাবাহিকতায় কফি চাষকে এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন ফসল হিসেবে যোগ করতে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এরই মধ্যে কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ কফির চারা বিতরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী। 


মো. ছানোয়ার হোসেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। ১৯৮৮ সালে মধুপুরের চাপড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ১৯৯০ সালে কালিহাতী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি আর ১৯৯২ সালে মধুপুর কলেজ থেকে ডিগ্রী সম্পন্ন করেন মো. ছানোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে ১৯৯৩-৯৮ সাল পর্যন্ত সিলেটের রেঙ্গাহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক আর পরবর্তী দুই বছর জেলার ঘাটাইলের গারোবাজার সুনামগঞ্জ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপরই শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে এসে গ্রামে শুরু করেন চাষাবাদ। 


দেবদারু চারার মত অনেকটাই দেখতে কফির চারা। কফির পাকা গুটিগুলো দেখতে টক টকে লাল ও কোন কোনটা কাঁচা হলুদের মতো। কাঁচাগুলো সবুজ। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ক গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। কফির পাশাপাশি ২৮০টি ড্রাগন পিলার, ১৯টি সৌদি খেজুর, ৫’শ পেঁপে, এক হাজার মাল্টা, ৫’শ লেবু, আনারস, ঔষধি, কলা, জাম্বুরা গাছে ভরপুর কৃষক ছানোয়ার হোসেনের বাগান। বর্তমানে প্রায় ১৫ একর জমিতে চলছে তার এই চাষাবাদ।


জানা যায়, মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হয়। আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্ক হয়। লালচে হয়ে যাওয়া কফির ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়। এরপর লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। একটু নরম হওয়ার পর কফির ওপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হয়। পরে গুটিগুলো রৌদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফিপান করার উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে গুড়া পাউডারের মতো করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদনও করা যায়। 

আরও জানা যায়, ফলন ভাল ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে হেক্টর প্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি এবং বছরে গাছ প্রতি ৫ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ফলন দেওয়া শুরু হলে গাছগুলো থেকে একটানা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায়। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মধুপুরের ১২০ জন কৃষক ৩৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু করেছে। চাষাবাদ বৃদ্ধিতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে কফি গবেষণা উন্নয়ণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ প্রথম পর্যায়ে ৫৩ জন কৃষকের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করাসহ জনপ্রতি ১৩৫ টি করে মোট ৯৪৫ টি কফি চারা দেয়া হয়। কৃষিবিভাগ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে।

বিশ্বে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। চাষ উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকুল থাকায় মধুপুর পাহাড়ী এলাকায় উন্নতমানের এবং ঘ্রাণের কফি চাষের বিশেষ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রোবাস্টা জাতের কফি চাষে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আবহাওয়া আর মাটি যথেষ্ট উপযোগী বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।


কফি চাষী ছানোয়ার হোসেন জানান, ২০১৭ সালে রাঙ্গামাটি জেলার রায়খালী থেকে ২’শ চারা সংগ্রহ করে এ উপজেলায় প্রথম আমি কফি চাষ শুরু করি। চাষ শুরুর দুই বছর পর থেকেই আমি কফি বিক্রি করতে পারছি। বর্তমানে আমার প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কফির আবাদ রয়েছে। আমার বাগানে অ্যারাবিক ও রোবাস্টা জাতের কফি গাছ আছে। প্রতি বছর আমি গড়ে প্রায় ১ টন কফি বিক্রি করতে পারছি। এছাড়াও কফির বীজ থেকে চারাও তৈরি করছি।


তিনি আরও জানান,বর্তমানে আমার বাগানের ৫’শ কফি গাছে ফলন হচ্ছে। গত সাত বছরে কফি বাগান বাবদ আমার ৩ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। তবে এরই মধ্যে আমি প্রায় দ্বিগুণ টাকা আয় করতে পেরেছি। এভাবে টানা ২০ বছর আয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 


ছানোয়ার জানান, প্রসাধনী কোম্পানির মাধ্যমে আমি প্রতি কেজি উৎপাদিত গ্রীণ কফি দুই হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করছি। উৎপাদিত কফির মধ্যে ১৮ প্রকারের স্বাদ ও গন্ধ আছে। বাজারজাত ও কফিপান করার উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। কফি প্রক্রিয়াজাত করার কাজটিই কঠিন। এ কারণে আমি কফি প্রক্রিয়াজাত করার মেশিন কিনেছি। কফিকে একটি বড় শিল্পে পরিনত করাই এখন আমার স্বপ্ন।

মধুপুরসহ দেশের কয়েকস্থানে শখের বশে ও বাণিজ্যিকভাবে কফির সফল চাষাবাদ হচ্ছে। দেশের মাটিতে কফি চাষের বিরাট সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কৃষকের আগ্রহ কাজে লাগিয়ে কফি চাষের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন ছানোয়ার।


মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী বলেন, এ উপজেলায় অ্যারাবিক ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ হচ্ছে। কৃষক ছানোয়ার হোসেন এ উপজেলায় ২০১৭ সাল থেকে কফি চাষ শুরু করলেও কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ কফির চারা বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। 


তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ উপজেলা কফি চাষের কৃষক সংখ্যা ১২০জন আর আবাদ হচ্ছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলার কৃষক ছানোয়ার হোসেন ব্যক্তি উদ্যোগে কফি বিক্রি করলেও বাণিজ্যিক ভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়নি। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭জন কৃষকের ৭ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করাসহ জনপ্রতি ১৩৫ টি করে মোট ৯৪৫ টি কফি চারা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন জানান, মধুপুরের মাটির উর্বরতা শক্তি কফি চাষের উপযোগী। এ এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না, তেমন খরাও হয় না। বৃষ্টিপাত ও মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। 

কফিকে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ কফির চারা বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়