শিরোনাম
◈ চিফ হিট অফিসার আতিককন্যা বুশরা কত টাকা বেতন পেতেন? ◈ জানলে চমকে যাবেন, সরকারের মেট্রোরেল মেরামতে সাশ্রয় হয়েছে কত টাকা?  ◈ নির্বাচনের সময় নিয়ে সরাসরি কথা বললেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ◈ সংস্কার নিয়ে সংলাপের চিন্তা: অগ্রাধিকার পাচ্ছে নির্বাচনি আইন ◈ (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার  ◈ ফরিদপুরে বাস খাদে পড়ে আহত ৩০, অলৌকিকভাবে উদ্ধার নবজাতক ◈ বাংলাদেশের ওয়ার্ক পারমিট বৈধতা স্থগিত করল ইতালি (ভিডিও) ◈ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ◈ হাসিনা সরকার বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছিল পিটার হাস্‌কে নিয়ে অস্বস্তির কথা ◈ পুলিশের আরও চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি

প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:২৪ রাত
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আ. লীগ নেতার বালুরঘাট দখল নিতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ

ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার জুগিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বালু ঘাট দখল করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিনভর গুলি বিনিময়, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির দলীয় সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌর বিএনপি'র ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলাম কে  সভাপতি পদ সহ সকল পর্যায়ে পদ থেকে বহিষ্কার ও ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান ( মজনু) কে  সাধারণ সম্পাদক পদ সহ সকল পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা বিএনপি।

বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর বিকালে  সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির প্যাডে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের স্বাক্ষরিত বহিষ্কারের  বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগের ওই পোস্টের মাধ্যমে জানা গেছে, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বর্ণিত ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মহিদুল ইসলামের পরিচালিত ওয়ার্ড সংযুক্ত জুগিয়া বালুরঘাট থেকে এলাকাবাসী স্বার্থ ক্ষুন্ন করে অবৈধ পন্থায় বালুরঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বালু উত্তোলনে সহযোগিতা করে, এলাকাবাসীর দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে 

সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সুস্পষ্ট অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌর বিএনপি'র ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলাম কে তার সভাপতি পদ সহ সকল পর্যায়ে পথ থেকে বহিষ্কার করা হলো। অন্যদিকে এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও জড়িত হয়ে জনমতে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দলের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রমাণ থাকায় ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান ( মজনু) কে তাহার সাধারণ সম্পাদক পদ সহ সকল পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হল। একই সাথে ১৫ নং ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল প্রকার সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপি সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কোন প্রকার অন্যায়কারীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয় না। কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বর্ণিত ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মহিদুল ইসলামের পরিচালিত ওই ওয়ার্ড সংযুক্ত জুগিয়া বালুরঘাট থেকে এলাকাবাসী স্বার্থ ক্ষুন্ন করে অবৈধ পন্থায় বালুরঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বালু উত্তোলনে সহযোগিতা করে, এলাকাবাসীর দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সুস্পষ্ট অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌর বিএনপি'র ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলামকে তার সভাপতি পদ সহ সকল পর্যায়ে পথ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান ( মজনু) কে তাহার সাধারণ সম্পাদক পদ সহ সকল পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৫ নং ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল প্রকার সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে ১৬ অক্টোবর বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার জুগিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বালু ঘাট দখল করাকে কেন্দ্র স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিভক্ত হয়ে যাওয়া দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিনভর গুলি বিনিময়, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টা হামলার ঘটনায় আ. লীগের সাথে বিএনপির এক অংশের নেতা কর্মীরা একত্রিত হয়ে বিএনপির অন্য আরেক অংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ধাওয়া করতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মহিদুল ইসলাম জুগিয়া বালু ঘাটের ইজারা নেন। গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে জুগিয়া বালু ঘাটের অবস্থান। গড়াই নদ খননের বালু জুগিয়া এলাকায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেই বালু টেন্ডারের মাধ্যমে ‘ডেকে’ নেন আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলামসহ অন্যরা। 

৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা দেশ ফেলে পালালে বালু ঘাটের দখল নিতে বিএনপির একটি পক্ষ তৎপর হয়ে ওঠে। ঘাট নিয়ে বারখাদা ও জুগিয়া এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, শহর যুবদলের সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান জনি, ছাত্রদল নেতা রাকিবুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে মহিদুলের সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী মহিদুল ৪০ ভাগ ও বিএনপিরে নেতারা ৬০ ভাগ অর্থ পাবে এ শর্তে বালু উত্তোলন শুরু হয়। 

এদিকে ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ না পেয়ে  শাহজাহান আলী সাজুর অনুগত কর্মীরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

এলাকাবাসীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুগিয়া ঘাটে বালু তোলা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। বিএনপি নেতা শাহজাহান আলী সাজু এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানালে মহিদুল ও বিএনপির অপর পক্ষের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। সাজুর অনুগত ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও তার অনুগতরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

বালু ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মহিদুল, তার ভাই ভাতিজা আর বিএনপির একটি পক্ষ আজ অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেন। এ সময় বিএনপি নেতা সাজু ও মিজানুর রহমানের লোকজন এবং এলাকার লোকজন একত্র হয়ে তাদের প্রতিহত করতে গেলে পাল্টা হামলা চালান। এ সময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গুলি ছুড়তেও দেখা যায়। 

এলাকাবাসী জানান, অস্ত্র হাতে একজন মহড়া দেন ও গুলি ছোড়ে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর একটি অংশও সাজুর সঙ্গে এক হয়ে মহিদুলের লোকজনকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। পরে মহিদুলের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, জুগিয়ায় বালু তোলার কারণে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। হানিফ ও তার ভাই আতার দোসর ছিল মহিদুল। তার কারণে এলাকায় মানুষ বসবাস করতে পারছে না। পাকা সড়কটি নষ্ট হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বালু ভর্তি ট্রাক চলার কারণে এ অবস্থা হয়েছে।

বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডার জিকু, রাকিবও রানাসহ অন্যরা বিএনপির পার্টি অফিসে হামলা চালায়। তারা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে। আমার সঙ্গে মহিদুলের কোনো সম্পর্ক নেই। বালু ঘাট থেকে কোনো ভাগ খাই না।’ 

শাহজাহান আলী সাজু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুলের সঙ্গে ওয়ার্ড বিএনপির কিছু নেতা এক হয়ে বালু উত্তোলন করছিল। এলাকার লোকজন এক হয়ে তাদের বাধা দিলে অস্ত্রসহ হামলা চালায় মহিদুলের ক্যাডার বাহিনী। তারা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গড়াই নদ খননের ফলে তোলা বালু স্তূপাকারে নদের পাড়ে রাখা হয়েছে। এই বালু এখন অপসারণের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নদের জুগিয়া ও গোপীনাথপুর মৌজায় রাখা বালুর স্তূপ সরানোর জন্য চলতি বছরের ১০ জুন মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মহিদুল ইসলামকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দরদাতা হিসাবে কার্যাদেশ দেয় পাউবো। এ কার্যাদেশে আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বালু অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে মহিদুল বালু অপসারণ করে বিক্রি করে আসছিলেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, গত দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে। অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়া বিষয়টি জানতে পেরেছি। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়