ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া : হাত-পা বেঁধে কুষ্টিয়া শহরের একটি চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এক কলেজছাত্রকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া আমিনুল হক বাদশা সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম রুবেল হোসেন (২২)। তিনি কুমারখালী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের ষষ্ট সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। কোর্টপাড়া আমিনুল হক বাদশা সড়ক এলাকায় লাল মিয়ার বাড়ির (বনফুড বেকারির আগে নিচতলায় সিমেন্টের দোকান ) চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় ছাত্রাবাসে থাকতেন তিনি।
২ অক্টোবর বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক চৌধুরী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রশি দিয়ে হাত-পা ও কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
রুবেলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাত্রাবাসের সঙ্গী আনিসুর রহমান বলেন, তিনতলায় তিনটি রুমে আমরা ৯ জন থাকতাম। রুবেলের রুমে তিনজন থাকতো। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে নিজ কক্ষ থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে নিচে নেমে এসে দেখি হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে রুবেল। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। এরপর কুষ্টিয়া থেকে রাজশাহীতে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কামরুল হাসান নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ধারণা করছি হাত-পা ও মুখ বেঁধে মারধর করে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাকে। তার দুই হাত ও দুই পা সাদা রশি এবং মুখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে ভবনের তিনতলায় গেলে ওই রুমের বারান্দায় একই রঙের রশি টানানো থাকতে দেখেছি। তিনি দাবি করেন এটা একটা হত্যাকাণ্ড।
মাহিম নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, ঘটনার পরই আমরা ছাত্রাবাসের ছেলেদের কাছে ঘটনা কি জিজ্ঞাসা করি। তারা কেউ কিছু জানে না বলছে। তবে চারতলা ভবনের ছাদ বন্ধ থাকে। বাড়ির মালিক ছাড়া ছাদের চাবি ছাত্রাবাসের এক ছেলের কাছে থাকে জানতে পেরেছি। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কিছু জানতে পারবে।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রুবেলকে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বুধবার সকালে কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপেন্দ্র নাথ সিংহ বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, ধারণা করছি- মেসের কোনো দ্বন্দ্বের কারণে রুবেলকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুবেলের রুমে থাকা হৃদয় ও রাইসুল সহ মোট পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হত্যার প্রকৃত কারণ নিয়েও রহস্য রয়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত রহস্য উম্মোচন হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বুধবার বেলা দুইটার দিকে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কয়েকশত শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে রুবেল হোসেনের হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে খুনিদেরকে সনাক্ত করে তাদেরকে আইনের মাধ্যমে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি যেন দেওয়া হয়।