এন এ মুরাদ,মুরাদনগর : মাদ্রাসায় নিয়মিত অনুপস্থিত প্রায় ৫ বছর। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় দেওয়া আছে প্রতিদিন উপস্থিতির স্বাক্ষর। বেতন বিলের সিটেও আছে নিয়মিত স্বাক্ষর। ক্লাস না করিয়ে শুধু হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন বেতনের টাকা। পুরো বিষয়টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জানলেও অজানা কারণে নেয়নি কোনো
ব্যবস্থা।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্ধসঢ়;রাসায় ঘটেছে এমন ঘটনা। অভিযুক্ত শিক্ষক ফোরকান মিয়া আকবপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রসার মাধ্যমিক শাখার কৃষি বিভাগের শিক্ষক। যার ইনডেক্স নাম্বার (সি-৩০২২৪২)। তিনি ২৫ জুন ১৯৮৮ সালে এই মাদরাসায় যোগদান করেন। স্থানীয় হওয়ায় এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলবার সাহস পায়না। মাদ্রাসায় আসা বা না আসা চলে তাঁর খেয়াল খুশিমতো। ওনার স্ত্রী একজন ইন্টারমিডিয়েট পাশ গৃহিনী । তাকে দিয়ে প্রক্সি ক্লাস নেন। এতে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থায় হ-যবরল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীও কমে গেছে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, কৃষি বিষয়ের শিক্ষক ফোরকান মিয়া এলাকায় মাছের ব্যবসা করেন। তার কয়েকটি মাছের পুকুর আছে। সেখানেই বেশি সময় দেন। মাদ্রাসায় আসলেও এক ঘন্টা করে চলে যান। বছরের বেশিরভাগ সময়ই মাদ্রাসার বাহিরে থাকেন। প্রতি সাপ্তাহে একদিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। বছরের পর বছর এভাবে চললেও গত ৫ বছর যাবত ওনার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে দিয়ে বিধি- বহির্ভূত ক্লাস নেন অধ্যক্ষ।
৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, “ ফোরকান স্যার নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না , ওনার স্ত্রীকে দিয়ে ক্লাস নেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ওই স্যারকে আমরা চিনিই না ”। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, “ ফোরকান মিয়া একজন মৎস চাষী। তাকে দিনের বেলা প্রায়ই আমতলী বাজরে দোকান পাটে দেখা যায়। একজন শিক্ষক ক্লাস রেখে কি করে হাটবাজারে ঘুড়ে বেড়ায় এটি বোধগম্য নয়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কি কোন নিয়মকানুন নেই ? এ নিয়ে তারা বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষক ফোরকান মিয়া বলেন, মাঝে মধ্যে ব্যবসার কাজে এদিক সেদিক যাই। তখন তিন-চার দিন মাদ্রাসায় আসতে পারিনা। ৪ বছর যাবত শরীরে ইউরিন সমস্যা আছে। ওটা বেড়ে গেলে ঢাকা উত্তরা ইবনেসিনা হাসপাতালে যাই। পরে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করি। এই বেতনে চলতে পারিনা। তাই মাছের ব্যবসাসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজে সময় দেই।
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সামাজিক ও ব্যবসায়ীক কাজে সময় দিচ্ছেন কাজটি ঠিক করছেন কিনা? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ বাড়তি রোজীর জন্য করি , আসলে যা করছি তা করা ঠিক না ”। তিনি আরো জানান, ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। মেয়ে স্বামী নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া থাকেন। মেয়ের জামাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ে শিক্ষকতা করেন ৫ লাখ টাকা বেতন পায়। কিন্তু আমি চলতে কষ্ট হয়। সরকার আমাদের ঠকাচ্ছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো.হাফিজুর রহমান বলেন, “ আমি ২০১০ সালে মাদ্রাসায় যোগদান করার পর থেকে ওনাকে অনিয়মিত পাই। শুরুর দিকে অনেকগুলো নোটিশ করেছি। কিন্তু কোন সুরাহ হয়নি। সে অসুস্থ্যতার কথা বলে মাদ্রাসায় নিয়মিত আসে না । শুনেছি মাছের ব্যবসা করেন ”। অসুস্থ্যতার কোন মেডিক্যাল সনদ আছে কি ? এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ জানান, “ না, ফোরকান মিয়া কোন মেডিক্যাল সনদ দিতে পারেননি।
এছাড়াও ফোরকান মিয়ার স্ত্রী ক্লাশ নেওয়ার বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির দ্বারা রেজুলেশনকৃত নয়। আসলে সব কিছুই নিয়ম বহির্ভূত হয়ে গেছে ”। মুরাদনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম তালুকদার জানান, “ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা- বানিজ্য করার কোন নিয়ম নেই। প্রক্সসি ক্লাসেরও কোন বিধান নেই। অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ”।