জাকারিয়া জাহিদ,কুয়াকাটা পটুয়াখালী : দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তালের কারণে আবারও খালি হাতে ঘাটে ফিরছেন উপকূলের জেলেরা। চলতি মৌসুমে কাঙ্খিত ইলিশ শিকার করতে পারেনি মৎস্যজীবীরা। লোকসানের ঘাণি টানতে টানতে ক্লান্ত এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা ১০ দিন মৌসুমী বায়ু ও নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় উপকূলের জেলেরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করেছে। সোমবার শেষ বিকেল থেকে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে উপকূলের হাজার হাজার মাছধরা ট্রলার গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে যায়। এরপর গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার হঠাৎ দমকা বাতাসের সাথে বৃষ্টি শুরু হয়। তখনই মাঝিরা ঘাটের উদ্দেশ্য ট্রলার চালানো শুরু করেন। কিন্তু ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাতাস কমে গেলেও মাছ কম থাকায় তারা ঘাটে ফিরে এসেছেন। আবার বাজার সওদায় করে দুই-এক দিনের মধ্যে মাছ ধরতে সমুদ্রে যাবেন। তবে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে আগামী দুই দিন উপকূলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশংকা রয়েছে।
জেলেরা জানিয়েছেন, ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই সামুদ্রিক মাছ আহরন'র উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর পরপরই দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ইলিশের দেখা পায়নি মৎস্য বন্দরের জেলেরা। সব মিলিয়ে হতাশ উপকূলের হাজার হাজার জেলেরা। কেউ কেউ পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। আবার অনেকেই দাদন নিয়ে বাধ্য হয়ে এ পেশাই পড়ে আছেন।
আলীপুর মৎস্য বন্দর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন কাজী বলেন, সম্প্রতি ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ শেষেই সাগরে শুরু হয়েছে দফায় দফায় নিম্নচাপ। যার কারণে সাগর থেকে ট্রলার নিয়ে বার বার জেলেরা ঘাটে ফিরে আসছে। ফিরে আসা এই ট্রলারগুলোর প্রত্যেকটিতে কয়েক লাখ টাকার বাজার করে সাগরে পাঠাতে হয়। কখনো নিম্ন চাপ কখনো লঘুচাপ সব মিলিয়ে বড় রকমের ক্ষতির মধ্যে আছি আমরা ট্রলার মালিকরা, ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি ইউসুফ আলী জানান, ৬৫ দিনের অবরোধের পর এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বাজার সওদায় করে যখনই সমুদ্রে নামি দুই এক দিন ফিশিং করার পরই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়, কোন উপায় না পেয়ে আবার ঘাটে ফিরে আসি। এভাবে চলতে থাকলে এ পেশা ছেড়ে দিতে হবে।
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস বলেন, ইলিশের দাম চড়াও থাকলে, ইলিশের তেমন দেখা পাচ্ছি না। বৈরী আবহাওয়ায় জেলেরা সমুদ্রে ফিশিং করতে না পারায় জেলে সহ আমরা আড়ৎদাররা বিপাকে পড়েছি। আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল ঘরামী বলেন, গত চার বছরে আমরা ব্যবসার মুখ দেখিনি। লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে এভাবে চলতে থাকলে এ পেশা টিকিয়ে রাখার কোন সাধ্য নাই।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র বার বার খারাপ হচ্ছে, ফলে গত কয়েক বছর আমরা দেখেছি গভীর সমুদ্রে লম্বা জালে কিছু মাছের দেখা পেলেও ভাসান জাল, কালো কট বা লাল জালের অধিকাংশ জেলেরা কিন্তু তেমন ইলিশ পাননি। সমুদ্রের মোহনা খনন এবং সমুদ্রের ভিতরে ১২/১৪ কিলো যে পলি বা চর পড়ে গেছে সেটা খনন করতে হবে, সেই সাথে মানুষের যে দূষণ, উপকূলবর্তী দূষণ, পলি ও রাসায়নিক দূষণ রোধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নতুন মৎস্য প্রাণী উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি, আমরা চেষ্টা করতেছি জেলেদের এই রকম কার্যক্রম বেগবানে বৈজ্ঞানিক কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সে বিষয় সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, আশা করছি অতি শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন হবে। ক্ষতিগ্রস্থ জেলেদের ব্যাপারেও সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন।