এন এ মুরাদ, মুরাদনগর, কুমিল্লা : গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার নীচে নেমে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গছে বসত ভিটা ও নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর। ঘর -দোয়ার হারিয়ে বেড়িবাঁধের উপর মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক বেশ কয়েকটি পরিবার। গোমতীর পাড়ের বাসিন্দাদের দাবি নদীভাঁঙ্গন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে আরো অন্তত ৫০টি বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুরাদনগর উপজেলার , পৈয়াপাথর, উত্তর ত্রিশ, নয়াকান্দি, দরিকান্দি , চৌধুরীকান্দি, দিলালপুর এলাকার বেঁড়ি বাঁধের ভীতরের বাড়িগুলো পানি নামার সাথে সাথে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অন্তত ২০টি পরিবার। এরা হলেন, সকিনা বেগম, হাছান মিয়া, কবির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রিপন মিয়া, শহিদ মিয়া, রাজু মিয়া, সাজু মিয়া, আনিছ মিয়া, শরিফ মিয়া, নুুরুল ইসলাম, নয়ন মিয়া ও শাহিনুর বেগম । ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এছাড়াও গোমীতীর পানিতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, বৈদ্যুৎতিক খুঁটি, হাঁস-মুরগির খামারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে থাকেন কিছু মানুষ।
চর-ভিংলাবাড়ী এলাকার কবির হোসেন বলেন, আমার পাকা বাড়ির অর্ধেক নদীর ভীতর পড়ে গেছে বাকিটাও ঝুলে আছে যেকোন সময় পড়ে যেতে পারে। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব আংতকে আছি।
উত্তর ত্রিশ গোমতীর পাড়ের বাসিন্দা খাইরুল আমিন বলেন, আমাদের তিনটি ঘর একেবারে নদীর ভাঙনে তলিয়ে গেছে। সব হারিয়ে ছেলে সন্তান নিয়ে বেঁড়ি বাঁধের উপর তাবু টানিয়ে আছি। কোন হৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগীতা না পেলে এভাবেই খোলা আকাশের নীচে জীবন কাটাতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের বসত বাড়িসহ আশেপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িঘর গোমতী নদীর ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটির কোনো চিহ্নই এখন নেই। বর্তমানে যেখানে আছি সেটিও বিলীন হওয়ার পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব বিপদে আছি।
সিএনজি চালক রিপন মিয়া জানান , “ আমার ৪ ছেলের চারটি ঘর নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়েগেছে। আমাদের থাকনের কোন যায়গা নাই। সব হারিয়ে এখন আমরা পথের ফকির।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতীর পানি নামার সাথে সাথে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সেগুলোর একটা তালিকা করে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সিফাত উদ্দিন বলেন, ইতি মধ্যে নদীর পাড়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা গুলো চিহ্নিত করে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।