শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনা সরকার রেখে গেছে ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন ◈ কী হয়েছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায়? যা জানা গেল ভাইরাল সেই ভিডিওটির সম্পর্কে (ভিডিও) ◈ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাবিতে শিক্ষার্থীদের গণপিটুনির শিকার  ◈ আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ ◈ প্রধান বিচারপতি যে ১২ নির্দেশনা দিলেন ◈ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম : রিমান্ডে যুবলীগ নেতা ◈ বিদেশে ‘সরানো’ দুই লাখ কোটি টাকার খোঁজে বাংলাদেশ : ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন ◈ আলজাজিরার অনুসন্ধান : যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার কোটির সম্পত্তি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী (ভিডিও) ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন ৭ জন, আগে যেতেন ১৫০-২০০ : বড় ব্যতিক্রম ◈ চীন অত্যাধুনিক হেলিপোর্ট বানাচ্ছে অরুণাচল সীমান্তের কাছে, চাপে ভারত

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:২০ রাত
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেড়িবাঁধের রাস্তাটি আছে বলেই বেঁচে আছি, পানিবন্দি দুই শতাধিক পরিবার

জাহাঙ্গীর লিটন , লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা দিঘলী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ প্রায় ২৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। প্রথমে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও পরে বন্যায় ঘরে-বাইরে পানি থৈ থৈ করছে। এতে চরম দূর্ভোগে রয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার।পানিও কমছে না দূর্ভেোগও থামছে না।দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ।

ভূক্তভোগীদের দাবি, এতো পানি আর কখনো এ অঞ্চলে দেখা যায়নি। মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশপাশের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তাও ছিল অপ্রতুল। এতে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর ত্রিপল দিয়ে চাউনি করে দিয়ে বসবাস করে আসছে পরিবারগুলো। বেড়িবাঁধের রাস্তাটি আছে বলেই মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। এ রাস্তাটি আছে বলেই বেঁচে আছেন দাবি পানিবন্দি পরিবারগুলোর।

সরেজমিনে দিঘলী ইউনিয়নের ওয়াপদা বেঁড়িবাঁধ সড়কের পূর্ব দিঘলী, পশ্চিম দিঘলী, দক্ষিণ রাজাপুর ও চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ে বেড়ির পাকা রাস্তাটিতে এখন ইটের কনা মাথা তুলে রেখেছে। মান্দারী-দিঘলী সড়ক থেকে বেঁড়িবাঁধে উঠতেই রাস্তার ওপরেই ২-৩টি অস্থায়ী চাউনি দেখা যায়। এ রাস্তায় যতদূর যাওয়া যায় ততদূরই অস্থায়ী চাউনিতে ঘেরা। তবে অটোরিকশা মাটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়াগা রয়েছে। তবে পুরো চিত্রটিই ছিল হতাশ হওয়ার। কারণ ১৫ ফুট চওড়া একটি রাস্তায় চাউনি দেওয়ায় অনেকগুলো ঘর দেখা যায়। দূর থেকে শুধু চাউনিগুলোই দেখা যায়। রাস্তা আছে বলে মনে হয় না।

রাস্তায় চাউনি দিয়ে বসবাসের ঘটনায় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মমিন উল্যা, জাহাঙ্গীর আলম, মনির হোসেন, রোকসানা বেগম, জাহিদা বেগম, নুর হোসেন, শাহাব উদ্দিন, হারুনুর রশিদ ও নুরনবীসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানায়, প্রায় ২৫ দিন ধরে তাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। প্রথমে বৃষ্টির পানিতে প্রায় ২ ফুট উচ্চতা ধারণ করে পানি। পানি একটু একটু কমতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করে নোয়াখালীর থেকে বন্যার পানি এসে ডুবিয়ে দেয় রাস্তাঘার, ক্ষেত-খামার ও বসতঘরগুলো। ততক্ষণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ভর্তি হয়ে গেছে। এতে তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। তখন বেড়িবাঁধের রাস্তাটিই সবার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে। রাস্তাতেই বাঁশের খুঁটি দিয়ে ত্রিপল ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে বসবাসের জন্য চাউনি নির্মাণ করা হয়। তবে শুধু নিজেদের জন্য নয়। গবাদিপশুর জন্যও চাউনি তৈরি করা হয়েছে। দুই শতাধিক পরিবার রাস্তাটিতে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই হচ্ছে কৃষিজীবী। কিন্তু বন্যার কারণে এবার চাষাবাদ সম্ভব নয়। বীজতলা তৈরি করলেও ধানের চারা রোপনের আগেই বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। এখানকার কৃষকরা আর্থিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফলজ গাছগুলো মরে যাচ্ছে পানিতে। বন্যায় ময়লা আর্বজনাযুক্ত পানিতে চলাচলে মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বন্যার পানি শুকালেও মানুষ সহজেই আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে না।

বন্যার্তদের পরিস্থিতি দেখতে পশ্চিম দিঘলী গ্রামে কোমর থেকে কোমর ও বুক পরিমাণ পানি ভেঙে যেতে হয়। এসময় দূর থেকে একটি শিশুকে কাঁধে নিয়ে বুকপানিতে এক নারীকে বেঁড়িবাঁধের দিকে যেতে দেখা যায়। তার নাম মুন্নি আক্তার। তিনি বলেন, আমি বাড়ি গিয়েছি। প্রতিদিন দুইবার বাড়িতে যায়। বাড়িতে যেতে বুক পরিমাণ পানি ভাঙতে হয়। চুরির ভয়েই প্রতিদিন কষ্ট হলেও বাড়ি যায়। আর আমরা এখন বেঁড়ির রাস্তার ওপর থাকি।

পশ্চিম দিঘলী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কৃষক বলেন, কোমড়ের ওপরে পানি ভেঙে ঘরে ঢুকতে হয়। ঘরের ভেতরে সব কাঁদা হয়ে আছে। বাধ্য হয়েই ঘরে আসি। এতো পানির মধ্যে ঘরে আসতে গেলে মনের আগুন জ¦লে উঠে। পানির কষ্ট আর সহ্য হয় না। বেঁড়িবাঁধের রাস্তায় কোনরকম রাত কাটায়। এ রাস্তাটি আছে বলেই কষ্ট হলেও আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছি।

জাহিদা বেগম বলেন, প্রথমে টানা বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠে। এরপর কমতেও শুরু করে। কিন্তু নোয়াখালীর বন্যার পানি এসে ঘরের চকিতে থাকা লেপ-তোষক সব ভিজে যায়। শুধু গরুগুলো নিয়ে রাস্তার ওপর উঠে আসি। গরুগুলোর খাবার জোগাড় করাই এখন কষ্ট হয়ে পড়েছে।

মমিন উল্যা বলেন, গাছপালা সব মরে যাচ্ছে পানিতে। ঘরের কাঠের খুঁটিগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। চারপাশের পানি থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সবাইকে নিয়ে বেঁড়ির রাস্তায় চাউনিতে ছিলাম। এখন ঘরের ভেতর থেকে পানি নামায় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চলে এসেছে। তবে ঘরের অন্য সদস্যরা এখনো রাস্তাতেই থাকে। পানিতে পুরো শরীরের ক্ষত ও চুলকানি দেখা দিয়েছে।

পূর্ব দিঘলী গ্রামের রোকসানা আক্তার বলেন, বেড়িবাঁধ ও খালের মাঝখানে সরকারি জমিতে থাকি। ঘরের ভেতর এখনো পানি। ঘরও ভেঙে যাচ্ছে। পড়ে যাচ্ছিল দেখে রশি দিয়ে টানা বাঁধ দিয়ে রেখেছি গাছের সঙ্গে।

দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কৃষিজীবী মানুষ। পুরো ক্ষেত এখন পানির নিচে। আমাদের পুকুরে মাছও চলে গেছে। আমাদের সব শেষ। গাছগুলোও মরে গেছে।

নুরুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০ কেজি ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। চারাও হয়েছে। চারারোপনের আগমুহুর্তেই বন্যা হানা দিয়ে সব ডুবিয়ে দিয়েছে। এবার আর চাষাবাদ করার সুযোগ নেই।

নুর নাহার এক নারী বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে থাকতাম। বন্যার পানি খাটের ওপরে উঠ পড়েছে। তখন রাস্তার ওপর উঠে আসি। এখন ঝুপড়ি ঘরে থাকি। ঘরের অনেক কিছু পানিতে নষ্ট  হয়ে গেছে। সেগুলো নিরাপদে নিয়ে আসতে পারিনি।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, প্রায় ২ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়ণকেন্দ্রে রয়েছে। তবে অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়