শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনা সরকার রেখে গেছে ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন ◈ কী হয়েছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায়? যা জানা গেল ভাইরাল সেই ভিডিওটির সম্পর্কে (ভিডিও) ◈ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাবিতে শিক্ষার্থীদের গণপিটুনির শিকার  ◈ আন্দোলনে নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ ◈ প্রধান বিচারপতি যে ১২ নির্দেশনা দিলেন ◈ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে বাদাম বেঁচে খেলেও ভালো করতাম : রিমান্ডে যুবলীগ নেতা ◈ বিদেশে ‘সরানো’ দুই লাখ কোটি টাকার খোঁজে বাংলাদেশ : ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন ◈ আলজাজিরার অনুসন্ধান : যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার কোটির সম্পত্তি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী (ভিডিও) ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন ৭ জন, আগে যেতেন ১৫০-২০০ : বড় ব্যতিক্রম ◈ চীন অত্যাধুনিক হেলিপোর্ট বানাচ্ছে অরুণাচল সীমান্তের কাছে, চাপে ভারত

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:১৮ রাত
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পূর্বাঞ্চলে রেল হাসাপাতালে কমিশন বানিজ্য সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট

এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হাসপাতালে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ ওঠেছে। দুর্নীতির ফলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে হাসপাতালগুলোতে। পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. আই এস আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে ওঠেছে নানা অভিযোগ। হাসপাতালের জন্য কেনা ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ যাবতীয় কেনাকাটায় মোটা অংকের কমিশন আদায়ের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফদের ট্রেনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ, বদলীবাণিজ্য ও বাসা বরাদ্ধের রয়েছে অনেক অনিয়ম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, হাসপাতালেল জন্য ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম না মেনে নিজস্ব লোক দিয়ে চড়া মূল্যে ক্রয় করে থাকেন। এসব কেনাকাটায় ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তারের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়না। কমিশন আদায়ের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদের (মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ) ওষুধ ক্রয় করেন। যা কিছুদিন পর মেয়াদ চলে গেলে তা ফেলে দিয়ে আবারও একই কায়দায় ঔষধ কিনে সরকারের টাকা অপচয় করেন। তাছাড়া যেসব কমদামি ঔষধ বেশি পরিমাণে দরকার তা কেনেন কম। আবার যেসব ঔষধ লাগে কম অথচ দাম বেশি এমনগুলো কেনেন বেশি করে। এতে তার কমিশনের পরিমান বেশি হয় বলেই এমনটি করে থাকেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ সরবরাহকারীকে ফেরৎ দেয়ার কথা থাকলেও কমিশন বাণিজ্যের কারনে তা করা হয়না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (১১ সেপ্টেম্বর) স্বল্প মেয়াদের হাজারে হাজার ঔষধ পড়ে আছে স্টোরে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এইসব ঔষধ রোগীকে দিয়েও শেষ করতে পারবে না। পরে এই ঔষধগুলোকে ফেরত দিতে হবে অথবা নষ্ট করে ফেলতে হবে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

 একইভাবে তাঁর একক আধিপত্য চলে যন্ত্রপাতি কেনাকাটার ক্ষেত্রেও। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চেয়ে অতিরিক্ত হিসাব দেখিয়ে খাবারের বিল করা হয়। যেখানে অতিরিক্ত বিলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আবার চট্টগ্রামের ল্যাবে ডাক্তার না থাকলেও বছর বছর অসংখ্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে।  শুধু ২৩-২৪ অর্থ বছরে এক্সরে ও ল্যাবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। 

বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের ট্রেনিং করানোর জন্য প্রতিবছর বাজেট থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেনিং না করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগে ট্রেনিং করানো হলেও তারা যে সম্মানী পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারি জানান ট্রেনিংয়ে যাদের ২৫০০ টাকা দেয়ার কথা তাদেরকে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। এই বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। 

সুত্র জানায় বাসা বরাদ্ধের ক্ষেত্রে সিনিয়র প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জুনিয়রকে বাসা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। চাপ প্রয়োগ করে ফার্মাসিস্ট সাবিনার বাসা বরাদ্ধের আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী সে বাসা পাওয়ার অধিকারি হলেও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে সিএমও তাঁর পছন্দের লোককে দিয়েছেন। ফলে সরকার অর্থ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ঢাকা রেলওয়ে হাসপাতাল দন্ত বিভাগে পিওন দিয়ে সেবা প্রধান করেন, যেখানে ডাক্তার না থাকলে টেকনোলজিস্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো যেত কিন্তু তিনি তা করছেন না। বিনা অপরাধে কোন প্রকার অভিযোগ না থাকলেও নিজের খেয়াল খুশিত মতো বা তার অন্যায় কাজে সমর্থন না থাকলে শাস্তিমুলক বদলী করে থাকেন। এই তালিকায় আছেন সাইফুদ্দিন, নাসির, সাবিনা, ওবায়দুর রহমান, কামরুল। আর শূন্য পদে বদলির জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তি টাকা নাদিলে হয়রানির শিকার হন। যেমন- মোঃ মাজহারুল ইসলাম খান হীরা। যা কর্মচারী শুধু সুবিধার থেকে বঞ্চিত।

তার এক নায়কতন্ত্রের ফলে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও করেনা।  পিওনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকলেও বিচার না করে অব্যাহতি প্রদানের জন্য উল্টো বাদিকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ ওঠেছে। 

এর আগেও রেলের নিয়োগবিধি ভেঙ্গে মো. ইয়াছিন ও বিবি মরিয়মসহ কয়েকজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৫ সালের ১৯ মে এস/খালাসী পদে যোগ দেয়া মো. ইয়াছিনসহ কয়েকজনকে অবৈধ পন্থায় জুনিয়র নার্স পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ওই তালিকায় ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন ওয়ার্ড এটেনডেন্ট পদ থেকে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। ১ জন মিডওয়াইফ ও অন্যজন এস/খালাসী। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও এস/খালাসী থেকে পদোন্নতি দিবে বা ৫ বছরের কম অভিজ্ঞাতা আছে এমন ব্যক্তিদের পদোন্নতি দিবে এমন কোন তথ্য ছিলনা। 
২০০৫ সালে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আয়া হিসেবে যোগদান করা বিবি আয়েশা পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে এমএলএসএস (পিয়ন)। এমএলএসএস থেকে অফিস সহকারি পদে পদোন্নতি নেন। পরবর্তীতে উচ্চমান সহকারি পদে পদোন্নতি নেন কয়েক দিন যেতে না যেতেই। আবার উচ্চমান সহকারী পদে তার শিক্ষানবিস টাইম পূরণ হওয়ার আগেই (ফিডার পোস্ট) প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পান।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. আই এস আব্দুল আহাদ  অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে হাসপাতালের অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনিয়মের কারনে নয়, লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতাল প্রায় অচল। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক ঔষধের মাঝে কিছু হয়তো স্বল্প মেয়াদ থাকতে পারে তবে তা তারিখ উত্তীর্ণ হলে ফেরৎ দেয়া হয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির কোন কারন নেই।  ডাক্তার নেই তবু ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাবের সরঞ্জাম কেনা অপচয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকলেও আমরা টেকনিশিয়ান দিয়ে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছি। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়