শিরোনাম
◈ গণহত্যা মামলা: কারাগারে পুলিশ কর্মকর্তা জসিম ◈ খাগড়াছড়িতে প্রতিপক্ষের গুলিতে ৩ ইউপিডিএফ কর্মী নিহত, অবরোধের ডাক ◈ ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি ◈ গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে দিলেন তালা  ◈ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে ঢুকলে ফিরিয়ে দিত, এই সরকার কঠোর আচরণ করছে : ভারতীয় জেলেদের সংবাদ সম্মেলন ◈ ৩৫ প্রত্যাশীরা ফের আন্দোলনে, পুলিশের লাঠিচার্জ-জলকামানে ছত্রভঙ্গ ◈ দুইটি হজ প্যাকেজের খরচ এর বিষয় যা জানাগেল ◈ রাজনীতিবিদ ছাড়া সংস্কার সফল হতে পারে না : মির্জা ফখরুল ◈ অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের প্রভাব : ডয়চে ভেলে প্রতিবেদন ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ

প্রকাশিত : ০২ আগস্ট, ২০২৪, ০৪:৪৯ দুপুর
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যশোরে ১৬ কোটি টাকার মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি কাজে আসছে না

রহিদুল খান, যশোর: [২] পানির অপর্যাপ্ততা ও গুণাগুণ ভালো না হওয়ায় যশোরের চাঁচড়ায় মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীদের কোনো কাজে লাগছে না। কেন্দ্রের ৫১টি সিসর্টান (চৌবাচ্চা) একসঙ্গে চালু রাখলে এখানকার পানির ট্যাংকটির চাহিদা মাফিক পানি সরবরাহের সক্ষমতা নেই। অর্থাৎ একই সময়ে সবকটি সিসটার্ন পানিতে পূর্ণ করার মতো ধারণ ক্ষমতা নেই এটির।

[৩] এ ছাড়া পানির মান খারাপ হওয়া সংরক্ষিত মাছ মারাও যায়। ফলে ১৬ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রটি মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাজে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্মাণ শেষের পর সাড়ে চার বছরেও এখনো পরিপূর্ণভাবে চালু হয়নি কেন্দ্রটি। 

[৪] উল্টো, এটি মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্ধ্যার পর সেখানে মদ ও গাঁজার আসর বসে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও মাছ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। বহুল প্রত্যাশিত এই পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের। মাছের পোনার নিরাপদ ও স্থায়ী একটি বাজার হয়ে উঠবে কেন্দ্রটি; এমনটিই ভেবেছিলেন মৎস্যপল্লি চাঁচড়ার মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কোনটাই পূরণ হয়নি। 

[৫] জানা গেছে, কেন্দ্রের বরাদ্দ প্রাপ্তদের অধিকাংশই মাছ চাষি না। এমনকি পোনা বিক্রির কারবারের সাথেও তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃত অর্থে মৎস চাষি ও ব্যবসায়ী নন তারা। নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার ক্যাটাগরিতে পড়েন না। মৎস্যপল্লি চাঁচড়ার অনেক মাছ চাষি এমন অভিযোগ করেছেন। তবে তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। 

[৬] অভিযোগ রয়েছে, পোনা উৎপাদন ও বিক্রির সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলেও জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের প্রভাবে তারা কেন্দ্রের বরাদ্দ পেয়েছেন। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কেন্দ্রের বরাদ্দ নিয়েছেন। ফলে কেন্দ্রটি চালু হচ্ছে না। ভুয়াদের বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃতদের কাছে হস্তান্তর না করলে কেন্দ্রটি চালুর সম্ভাবনা নেই বলে অভিমত মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের। 

[৭] কারণ হিসেবে তারা জানান, কেন্দ্রের সিস্টার্ন ও স্থান বরাদ্দ প্রাপ্তদের বেশির ভাগেরই মাছ উৎপাদন ও ব্যবসায়ের ৫ বছরের অভিজ্ঞতা নেই। অথচ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতিমালায় এমন শর্তের উল্লেখ রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন মাছ চাষি ও পোনা বিক্রেতা কেন্দ্রের বরাদ্দ পেলেও সেখানে যেতে আগ্রহী না। বিদ্যুত ও গার্ডের বিলসহ অন্যান্য খরচের ভয়ে সেখানে ব্যবসায় পরিচালনায় আগ্রহ নেই তাদের। এ ছাড়া কেন্দ্রে যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে প্রকৃত অর্থে সেসবের কিছুই এখানে নেই। পানির অবস্থাও ভালো না। পানিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি এমন দাবি চাঁচড়ার মাছ ব্যবসায়ীদের।

[৮] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০ শতক জমি কেনা হয়। চাঁচড়ার মাগুরপট্টিতে এই জমি কেনে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর। জমি কেনার পর ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর। বৃহত্তর যশোর জেলায় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নের নির্মাণ হয় কেন্দ্রটি। ওই বছরই প্রকল্পটির মেয়াদও শেষ হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর পেরোতে গেলেও কেন্দ্রটি পরিপূর্ণভাবে চালু করতে পারেনি যশোরের মৎস্য বিভাগ। এমনকি অব্যবহৃত পড়ে থাকা কেন্দ্রটির কোনো খোঁজও রাখেন না জেলা মৎস্য দপ্তরের কর্মরতরা। কেন্দ্রটির প্রকৃত কোনো তথ্যই তাদের কাছে নেই।

[৯] মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তৎকালীন উপ-প্রকল্প-পরিচালক মাহাবুবুর রহমানের কাছ থেকে কেন্দ্রটি সর্ম্পকে বিস্তারিত জানা যায়। তিনি জানান, কেন্দ্রের নিচ তলায় ৫১ টি সিস্টার্ন আছে। এগুলো হ্যাচারির চারকোণা হাউসগুলোর মত। একেকটি সিসটার্ন লম্বায় আট ফুট ও চওড়ায় তিন ফুট। উচ্চতা ৪ ফুট। আর ওপর তলায় হাড়ি পেতে ৬০ জনের মাছ বিক্রির জায়গা রয়েছে। প্রতি তলায় একটি করে পানির ট্যাংকি আছে। এখানে পানির রিসাইক্লিং সুবিধাও রয়েছে। আছে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহৃত পানি রিফাইন (পরিশোধন) করে পুনরায় ব্যবহারের বন্দোবস্তও। তিনি জানান, হাউস ভাড়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের একটি নীতিমালা আছে। সেই মোতাবেক বরাদ্দপ্রাপ্তদের বার্ষিক ভাড়া দিতে হবে। এক্ষেত্রে একেকটি সিসটার্নের ভাড়া বছরে ৬ হাজার টাকা। হাড়ি পেতে মাছ বিক্রির জন্য যারা বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের বাৎসরিক ভাড়ার পরিমাণ ২৪০০ টাকা।

[১০] চাঁচড়ার আল্লার দান ফিস প্রকল্পের সত্ত্বাধিকারী ও দেশি শিং-মাগুর বিক্রেতা সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সেলিম হোসেন জানান, পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটিতে ব্যবসায়ের কোনো পরিবেশ নেই। ওখানকার পানির অবস্থা একদমই ভালো না। পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। ওয়াটার রিসাইক্লিং সুবিধার কথা বলা হলেও আদতে সেরকম কোনো সুবিধা নেই। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে মাছের ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্রে নানা অনিয়নম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানকার সিসটার্ন বরাদ্দ নেননি। জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে দুটো হাউস নির্মাণ করে পোনা বিক্রি করছেন। 

[১১] মৎস চাষি কল্যাণ সমিতি যশোর জেলা শাখার শাখার সিনিয়র সহসভাপতি ও ফাল্গুনী মৎস্য খামারের স্বত্ত্বাধীকারী মিজানুর রহমান বাবলু জানান, মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটিতে ৫১টি সিসটার্ন রয়েছে। সবগুলো সিসটার্ন যদি একসাথে ব্যবহার করা হয় তাহলে কেন্দ্রটির যে পানির ট্যাংক রয়েছে; সেটিতে সংরক্ষিত পানি সবকটি সিসটার্ন পরিপূর্ণ করতে সক্ষম না। তিনি বলেন, ‘সাদা মাছ’ হাউসে সংরক্ষণে সব সময় পানি লাগে। যখন তখন পানি পাল্টাতে হয়। ফলে কেন্দ্রের পানির ট্যাংকটির সবকটি সিসটার্নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি একসঙ্গে ধারণের সক্ষমতা না থাকাটা একটি বড় সমস্যা। 

[১২] জেলার মৎস্য বিভাগ সূত্র জানা যায়, দেশে উৎপাদিত মোট রেণু-পোনার ৬০ ভাগই যশোরের চাঁচড়ার হ্যাচারি ও নার্সারিগুলোতে উৎপাদন হয়। এখানকার হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদনের বাৎসরিক পরিমাণ ৬৮ হাজার কেজিরও বেশি।

[১৩] চাঁচড়ার মাছ চাষিরা জানান, পোনা বিক্রির নির্ধারিত কোনো বাজার না থাকায় রাস্তার পাশের খোলা স্থানে বেচাকেনা চলে। এতে দুর্ঘটনা ও হয়রানির শিকার হতে হয় । এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তারা বিশেষায়িত একটি সরকারি মাছ বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা আরো জানান, মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হলেও কোনো কাজে লাগছে না। বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেন্দ্রটি বরাদ্দ দেয়ায় এটি চালু হচ্ছে না। নীতিমালা বলা আছে প্রকৃত মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীরা এটির বরাদ্দ পাবে। কিন্তু সেটি মানা হয়নি। নীতিমালায় বলা আছে কেন্দ্রে সিসটার্ন বরাদ্দ প্রাপ্তরা নিজেরা এটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু অনেক সেটি ভাড়া দিচ্ছেন। মাত্র তিনজন সেখানে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। 

[১৪] তবে মৎস্য বিভাগের দাবি, ২০ জন মাছ ব্যবসায়ী সেখানে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, মাছের পোনা বিক্রয় কেন্দ্রটি পরিচালনার একটি নির্দেশিকা আছে। সেটির আলোকে আমরা কেন্দ্রটি পরিপূর্ণভাবে চালুর চেষ্টা করছি। কিন্তু সেভাবে সাড়া পাচ্ছি না। তারপরও আন্তরিকতার সাথে এটি পুরোপুরি ভাবে সচলের চেষ্টা করছি। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়