হাবিবুর রহমান, কক্সবাজার: [২] গত ৩ দিন ধরে কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এতে জেলার ২৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে আড়াই লাখ মানুষ। ভূমি ধস, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বিশেষ করে গ্রামীণ রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বেশি। পানিবন্দি এসব মানুষের খাবার পানি ও শুকনা খাবার সংকট বলে জানা গেছে।
[৩] বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দেখা গেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কেও। বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া, চাউল বাজার সড়ক, হাঙর পাড়া, গোলদিঘীরপাড়, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম।
[৪] কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়ক প্লাবিত হয়ে, এক পর্যায়ে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। এতে অনেক বাড়িঘরের আসবাবপত্র, দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ঝিলংজা ১ নং ওয়ার্ডের পূর্ব কলাতলী চন্দিমা মাঠ এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
[৫] কক্সবাজার পৌরসভার এক নং ওয়ার্ডের এজাবত উল্লাহ জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেকসহ ৮ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকায় ১০ হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে।
[৬] কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরো ৩ দিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। এজন্য কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
[৭] কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ. কে. এম তারিকুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা এই শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ সমস্যা নির্মূলে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে পৌর পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে নালা-নর্দমা দখল করে নির্মিত স্থাপনা ধ্বংস করে পুনরায় উদ্ধারের কাজ শুরু করেছি। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে রামু ও উখিয়া উপজেলায়। যেখানে ২ শতাধিক গ্রামের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
[৮] কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমান ইসমাইল বলেন, তার ইউনিয়নে ২০ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। যেখানে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম ছৈয়দ আলম জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দি। যেখানে ৫০টি গ্রামের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ রয়েছে।
[৯] রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, ওই ইউনিয়নের ২০ গ্রামের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। একইভাবে পালংখালী ইউনিয়নের ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যেখানে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।এছাড়া টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগ নিয়ে দিনাতিপাত করছে।
[১০] হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক-উপসড়ক। ইউনিয়নের অনেক গ্রাম পানিবন্দি। সংকট দেখা দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বিশেষ করে পানিতে ডুবে গেছে থাইংখালী কবরস্থানসংলগ্ন ও বালুখালী ব্রিজসংলগ্ন প্রধান সড়ক এলাকা। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে প্রধান সড়কের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে যানবাহন চলাচলে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় হাঁটাচলাতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। টানা বৃষ্টিতে মঙ্গলবার রাতে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে সিএনজি ড্রাইভার আবদুর রহিমের বাড়ি পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে। এতে প্রাণহানি না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
[১১] ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম। তবে স্বস্তিতে রয়েছে চকরিয়ার মানুষ। একসময় ভারি বৃষ্টিপাত হলে সবার আগে চকরিয়া তলিয়ে যেত। তবে বেড়েছে মাতামুহুরী নদীর পানি। এজন্য বিপদের শঙ্কাও রয়েছে।
[১২] কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও শহরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে পান্দিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্ব স্ব ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :