ফরিদপুর প্রতিনিধি: [২] ফরিদপুরের মধুখালীর মধুমতি নদীর উপর নির্মিত গড়াই সেতুর টোল আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এ কারণে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। গড়াই সেতুর গড়িয়াদহ ভায়া বালিয়াকান্দি সড়কের টোলের অর্থ যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পকেটে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর ওই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
[৩] ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর ও যশোরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ১৯৯১ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর-মাগুরার সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর উপর গড়াই সেতু (কামারখালী ব্রীজ নামে পরিচিত) নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া এলাকায় অবস্থিত টোল ঘরে সেতুটির টোল নেওয়া হয়।
[৪] সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই প্রায় ৩১ বছর যাবত ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে থাকেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত ৩০ জুন ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন ইজারাদার দেওয়ার জন্য দরপত্র প্রকাশ করেন। কিন্তু যথাসময়ে কোন ইজারাদার দরপত্র দাখিল না করায় ১জুলাই থেকে সড়ক জনপথ বিভাগ নিজেরাই যানবাহন থেকে টোল আদায় শুরু করেন।
[৫] সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গড়াই সেতু টোল ঘর থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে মাগুরা ভায়া রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সড়কের প্রবেশদ্বার মধুখালীর গরিয়াদহ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল সেতু পার হয়ে ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করছে। যানবাহনের মধ্যে মাইক্রোবাস ৭৫টাকা, প্রাইভেটকার ৪০ টাকা, নসিমন-করিমন থেকে ৩০ টাকা ও মোটরসাইকেল থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা।
[৬] বালিয়াকান্দি সড়কের গরিয়াদহ থেকে যারা টোল আদায় করছে তাদের দাবি, ইজারাদার থাকতে তারাই টোল আদায় করতেন। ইজারাদার না থাকায় তারা যে টাকা প্রতিদিন উত্তোলন করেন ওই টাকা স্থানীয়দের কয়েকজন ভাগ বাটোয়ার করে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনুমোদন ছাড়াই কেন টোল নিচ্ছেন জবাবে আলমগীর হোসেন নামে অবৈধ টোল আদায়কারী এক ব্যক্তি বলেন, সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলেই মানবিক কারণে টাকা তুলছেন।
[৭] টোল দেওয়া প্রাইভেটকার চালক মো. শাহিন বলেন, রাস্তা সংক্ষেপ করার জন্য গরিদাহ মোড় হয়ে বেনাপোল থেকে বালিয়াকান্দিতে যাচ্ছি। এখানে টোল বাবদ ৪০ টাকা নেওয়া হলেও কোন রশিদ আমাকে দেওয়া হয়নি। অপর টোল দেওয়া রাজবাড়ী থেকে মাগুরায় যাওয়া প্রাইভেটকার চালক আলিরাজ জিহাদ বলেন, টোল তো এখানে না, তারপরও এখানে স্থানীয়রা টোল আদায় করছেন। এর আগে একবার আমাকে টোলের জন্য রশিদ দিয়েছিল। কিন্তু আজকে আমি ৪০ টাকা দিয়েছি। কোন রশিদ দেয়নি তারা। এটা বন্ধ করা উচিত।
[৮] বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্থানীয় আড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. বদরুজ্জামান বাবুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে সেখানে তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ওদের টোল নিতে বলা হয়েছে। সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলেই এটা করা হচ্ছে। গরীব মানুষ ওদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই টোলের টাকা নিয়ে তারা সংসার চালাচ্ছে। তবে এটা আইনসঙ্গত নয় বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান।
[৯] গড়াই সেতুর মূল টোল আদায় ঘরে দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফ হোসেন জানান, সেতুর টোল একমাত্র আমরাই নিতে পারবো। অন্য কেউ এখান থেকে টোল আদায় করতে পারবেনা। এখানের প্রভাশালীরা গরিয়াদহ মোড় থেকে টোল নিচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানও জড়িত আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। দ্রুতই অবৈধ টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[১০] এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে রয়েছেন বলে জানান।
[১১] তবে এব্যাপারে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, 'সম্প্রতি ইজারাদারদের টোল আদায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের যে স্টাফ ছিল তারা বেকার হয়ে যায়। তারপর তারা স্থানীয়দের যোগসাজশে এভাবে টাকা তুলছিল। তবে এটা পুরোপুরি চাঁদাবাজি। আমি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাই। পরে একইদিন বিকালে পুলিশ পাঠিয়ে সেটা বন্ধ করা হয়েছে।'
[১২] এব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, 'এভাবে টাকা তোলার কোনো সুযোগ নেই। প্রশাসন ওই অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করেছেন। এছাড়া আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। সেখানে যেন খাসভাবে টোল আদায় করা হয়।' সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :