আয়াছ রনি, কক্সবাজার: কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার শহরসহ জেলার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এবিসি ঘোনা এবং সদর উপজেলার বিসিক শিল্প এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো: রকিবুজ্জামান। নিহতরা হলেন- কক্সবাজার শহরের এবিসি ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার (৩০) এবং সিকদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান (৫)। তাছাড়া বিসিক শিল্প এলাকায় পাহাড়ধসে লায়লা বেগম নামের এক নারী মারা গেছেন। তার স্বামীর নাম বজল আহমেদ। এ ঘটনায় তাদের দুই বছরের ছেলে মোহাম্মদ জুনায়েদ গুরুতর আহত হয়েছে।
এদিকে কলাতলী সৈকতপাড়ায় ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক পাহাড় ধসে একটি পরিবারের সকলেই চাপা পড়ে। অন্যান্য সদস্যদের জীবিত উদ্ধার করা হলেও মিম (১০) নামের একটি শিশুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।শিশুটি কলাতলী সৈকতপাড়া এলাকার মো. সেলিমের বড় মেয়ে। স্থানীয়দের বরাতে রকিবুজ্জামান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বাড়ির ওপর আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেয়াল ভেঙে এক শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে মাটি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ভোরে কক্সবাজার শহরের এবিসি ঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে বাড়ি বিধ্বস্ত হলে জমিলা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) মাগরিবের পর পাহাড় ধসে কক্সবাজারের কলাতলির সৈকত পাড়া এলাকার সেলিমের পরিবারের স্ত্রী নুর জাহান সহ তাদের সন্তান লামিয়া হাবিবা, হুজাইফা, মাওয়া ও মিম মাটির নিচে চাপা পড়ে। পরে তাদেরকে সেখানা থেকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও মিমকে মৃত উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো দ্রুত উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে এবং দুর্ঘটনাস্থলে প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করে। এলাকার মানুষও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
রকিবুজ্জামান বলেন, ভোরে জমিলা আক্তার রান্নাঘরের পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। তার স্বামী আরেক কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়লে জমিলা মাটি চাপা পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
টানা বর্ষণের ফলে গতকাল কক্সবাজারে ৩৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসে পড়ে, যা পরিবারটির উপর আঘাত হানে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার সদর রামু এবং কক্সবাজার পৌরসভার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে পর্যটন শহরের কলাতলী সড়কসহ অনেক ছোট বড় সড়ক এবং বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪-৫ ফুট পানিতে ডুবে গেছে। শহরের পর্যটন এলাকা হোটেল মোটেল জোনে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :