ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া: [২] কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
[৩] বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টায় শতাধিক শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কলেজের ক্যানটিন থেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে কলেজ চত্বরে বের হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা কুষ্টিয়া রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘুরে হাসপাতালের সামনে গিয়ে জড়ো হন। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও সভা করেন।
[৪] এ সময় তারা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত হাসপাতাল কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। এর অনুলিপি কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের কাছেও দেওয়া হয়।
[৫] আন্দোলনকারীরা বলছেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। কবে নাগাদ অনুমোদন হবে, সে বিষয়েও তথ্য নেই।
[৬] মানববন্ধনের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। কারণ, মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল অংশ চালু হয়নি।
[৭] শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু হয়নি। নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।
[৮] সব মিলিয়ে বর্তমানে ক্যাম্পাসে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত রোববার থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ভাড়া করা দুটি বাসের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন বাসের ভাড়ার টাকা সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া চালক না থাকায় মেডিকেল কলেজের একটি বাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যেতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন।
[৯] উল্লেখ্য, গত কয়েক দশকের মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হলো কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন হাসপাতাল। এটি কুষ্টিয়া রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কসংলগ্ন প্রায় ২০ একর জমির ওপর নির্মিত। নির্মাণাধীন হাসপাতালের সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা থাকছে।
[১০] এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। কলেজ ও হাসপাতাল মিলে থাকছে ২১টি বড় লিফট। ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিই্উ, অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলোজি, গাইনী, চক্ষু ও নাক,কান-গলাসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আমদানী এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানি চাহিদার ৬০ ভাগ কোটি কোটি টাকার যন্ত্র-মেডিকেল সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
[১১] জেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহুল প্রত্যাশিত এই প্রকল্প দুটি অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে। এর ফলে নানা রকম সুফল ভোগ করবে এই অঞ্চলের মানুষসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ। শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন নয় মেডিকেল কলেজটি পূরণ করবে এই এলাকার শত শত শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।
[১২] অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের সঙ্গেই নির্মাণাধীন ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির কারণে এই এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় জেলা বাসি সহ আশপাশের জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ মানুষ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও নানান দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :