শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২৪, ০৩:২৪ দুপুর
আপডেট : ০৮ জুলাই, ২০২৪, ০৩:৩৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাস্তার কারণে আত্মীয়তা করতে চান না এলাকার মানুষের সাথে    

আজিজুল ইসলাম, যশোর: [২] বৃষ্টির পানি জমে বেহাল অবস্থা সড়কটির। কাদাযুক্ত ছোট বড় গর্তে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়েই অতিকষ্টে যাতায়াত করছে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের মানুষ। বেহাল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার মানুষদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চান না অন্য এলাকার বাসিন্দারা।

[৩] সড়কটি বাঘারপাড়া উপজেলার উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে ও পার্শ্ববর্তী শালিখা উপজেলার দক্ষিন প্রান্তে চিত্রা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এই কারণে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ওই এলাকাবাসী। মূলত অবহেলা ও রাজনৈতিক কারণে এ রাস্তাটি মেরামত হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মাত্র দেড় কি;মি; মাটির সড়ক দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না করায় লোক চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের চলাচলে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দূর্ভোগ। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই কষ্টদায়ক।

[৪] এই সড়ক পথেই খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানপুর হাইস্কুল ও খানপুর দাখিল মাদ্রাসায়  ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। একটু বৃষ্টিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায় এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষজনের যাতায়াত এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটি দিয়ে।

[৫] স্থানীয় বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না এই রাস্তার কারণে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরে যায় শুধু এই রাস্তার জন্য। আমার এই বয়সে আমি একবার দেখছি মাটি ফেলতে এই রাস্তায়। এমপি ও আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন বৃষ্টির দিনে এই রাস্তাটি একবার দেখে যাবেন।

[৬] গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আছির শেখ জানান,দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি পাকা করার দাবি করে আসলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল কিংবা রিকসা-ভ্যান নিয়ে চলাচল করা যায় না। গ্রামের কিছু শিশু, কিশোর ও তরুণ মিলে কাঁচা রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ করে। তাতেও কোন ফল না পেয়ে নিজেরা রাস্তাটির মাত্র একস্থানে কিছু ইট কিনে বিছিয়ে দিয়েছে। সেটুকুও প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁচা রাস্তাটি  চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

[৭] কলিম উদ্দিন  নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি এখন ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। এই রাস্তা দিয়ে একজন রোগী কীভাবে বাড়ি যাবে আপনারাই বলেন? আমাদের চলাচলে বহু কষ্ট এই রাস্তাটি দিয়ে। একজন পথচারী বলেন, আমি এই এলাকার জামাই। বৃষ্টির দিনে শ্বশুরবাড়িতে আসলে হাতে জুতা আর প্যান্ট উঠাতে হয় হাঁটু সমান। আমার বিয়ের পর ধরেই দেখি এই রাস্তার অবস্থা এমন। মনে হয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বররা এলাকার খোঁজ রাখেন না।

[৮] সরজমিন দেখা গেছে,গ্রামের একেবারে উত্তরপ্রান্তের এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হলেও আজ পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের বাড়ির মোড় হতে পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় ছোট বড় প্রায় শতাধিক খাদ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দুই পাশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাস্তার প্রশস্ততা কমে গেছে।

[৯] এলাকারবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ ১০-১৫ বছর যাবৎ এ রাস্তার বেহাল দশা হলেও এ পর্যন্ত কোনো নেতা বা জনপ্রতিনিধির এদিকে নজর পড়েনি। খানপুর গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর যাবৎ এ রাস্তাটি থাকলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। একই গ্রামের ভ্যান চালক মনু মোল্লা জানান, বেহাল দশার এ রাস্তা দিয়ে ছোট একটি যানবাহন নিয়ে যাত্রী এবং মালামাল বহন করি। কিন্তু রাস্তা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার ফলে প্রায় প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি। ওই এলাকার ছেলে সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুবই দুরুহ ব্যাপার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কিছুই হয়নি,তবে তিনি রাস্তার উন্নয়ন করবেন বলে জানিয়েছেন।

[১০] এই বিষয়ে নারিকেলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু সাহা বলেন, বিষয় টি অবহিত হয়েছি, আমি নিজে রাস্তাটা দেখতে যাব। রাস্তাটি অনেক দিনের পুরোনো। বর্ষা এলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এ রাস্তার উন্নয়নের জন্য এডিপি প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হবে। নানা জটিলতার কারণে রাস্তাটির কাজ করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি আগামীতে অবশ্যই এ রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হবে। যখন রাস্তা সংস্কারের সময় আসবে তখন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুরোটাই আমি ইটের সলিং করে করে দেব। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়