শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ জুলাই, ২০২৪, ০৫:১৭ বিকাল
আপডেট : ০৬ জুলাই, ২০২৪, ০৫:১৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে মারা পড়ছে ভিন্ন প্রজাতির সাপ

আদনান হোসেন, ধামরাই: [২] ঢাকার ধামরাইয়ে রাসেলস ভাইপার সাপের ভীতির মধ্যে মারা পড়ছে অন্য প্রজাতির সাপ। গত ১০ দিনে অন্তত অর্ধ শতাধিকের বেশি সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পিটিয়ে মারা সাপের বেশিরভাগই নির্বিষ। আর রাসেলস ভাইপার দেখা যাওয়ার তথ্যগুলোও গুজব।

[৩] গত ১৬ জুন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি খবরে দাবি করা হয়, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা গ্রামে স্থানীয়রা একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছেন। খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে।বিষয়টি নিয়ে  জানতে ওই এলাকায় গেলে কে বা কারা ওই সাপ মেরেছেন,সেই বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

[৪] ইউপি সদস্য ও ওই গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, জালসা গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাপটি মারা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সেটি রাসেলস ভাইপার নয়। এই তথ্যটি গুজব। দুই দিন পর আবার একই ভাবে ফেসবুকে খবর ছড়ায় উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামে রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় গিয়েও এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

[৫] সোমভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন বলেন, ওই ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ গুজব।

[৬] এদিকে এসব খবরের মধ্যেই গত ২০ জুন উপজেলার আমতা ইউনিয়নের কাঁচা রাজাপুর গ্রামে তহিরন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা সাপের কামড়ে মারা যান। তথ্য ছড়ায় ওই নারী রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে মারা গেছেন। 

[৭] তবে আমতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, বাড়িতে কাজ করার সময় তহিরন নেছাকে সাপে কামড় দিয়েছে। তবে কোন সাপ তাকে কামড় দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

[৮] গত ২৩ জুন সানোড়া ইউনিয়নের সানোড়া খালপাড় এলাকায় মা সাপসহ আরও যে ২৩ সাপ পিটিয়ে মারা হয় সেটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি ছিল নির্বিষ দাঁড়াস সাপ। 

[৯] একইভাবে ধামরাই সদর ইউনিয়নের শরিফবাগ এলাকায় রাসেলস ভাইপার গুজবে পিটিয়ে মারা হয় নির্বিষ প্রকৃতির একটি মা দাঁড়াস সাপসহ মোট ২৯টি সাপ।

[১০] এছাড়াও উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায়ও রাসেলস ভাইপার গুজবে একটি দাঁড়াস সাপ পিটিয়ে মারা হয়। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড লাকুড়িয়া পাড়া এলাকায় মারা হয় একটি গোখরা সাপ।

[১১] জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, সব সাপেরই প্রকৃতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রায় সব সাপের প্রধান খাবার ইঁদুর। ফলে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে সাপের ভূমিকা রয়েছে। আর রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। কিন্তু যেমন প্রচার হচ্ছে তেমন নয়। সাপ আগেও ছিল। এখনও আছে। এভাবে সাপ নিধন সঠিক নয়। সাপ রক্ষায় মানুষকে গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করতে হবে। যে কোনো প্রাণী মেরে ফেলা বে-আইনি, আইনের পরিপন্থী। 

[১২] রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে এই ভুল তথ্য থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সাপ রক্ষায় সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। আর এ বিষয়ে সচেতনতা চালানো হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

[১৩] সচেতন নাগরিক সমাজ ধামরাইয়ের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, প্রতিটি প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে জেনে না জেনে নির্বিচারে সাপ পিটিয়ে মারা হলে সেটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে। ফলে যারা বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

[১৪] ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালিব আল মোমিন বলেন, সাপ নিধন বন্ধে বন বিভাগ যথেষ্ট তৎপর। ইউএনওসহ উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি সাপ নিধন বন্ধের জন্য। আর যেসব সাপ মারা হচ্ছে, এগুলো বিষধর নয়, ঢোরা সাপ মারা হচ্ছে। এই সাপ মারার মধ্য দিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। ধামরাই-আশুলিয়ায় রাসেলস ভাইপার দেখা যায়নি। 

[১৫] এটি যদি দেখাও যায়, তাহলে আমাদের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে যে রেসকিউ দল রয়েছে তাদের হটলাইনে খবর দিলে তারা এসে সাপ উদ্ধার করবে। মানুষ যাতে সাপের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়, তাদের সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

[১৬] ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়