রহিদুল খান, চৌগাছা (যশোর): [২] যশোরের চৌগাছায় মা-বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলেকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জর্জ সপ্তম আদালতের বিচারক জনাব জুয়েল অধিকারী এ রায় প্রদান করেন।
[৩] রায়ে মামলার একমাত্র আসামি হাবিবুর রহমান মিলন ওরফে মিলন উদ্দীন (৩২) কে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এসময় আদালতে পিপি অ্যাড. সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও আসামি হাবিবুর মিলন কাটগঢ়ায় উপস্থিত ছিলেন। আদালতে বাদী হুমায়ন কবির ও তার পরিবারের সদস্য এবং উৎসুক জনতা উপস্থিত ছিলেন।
[৪] মামলার নথিসুত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টার সময় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান মিলন (৩২) পিতার কাছ থেকে নেশার টাকা না পেয়ে পিতা মহির উদ্দীন (৬২) কে ধারালো গাছি দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এসময় তার মা আনোয়ারা বেগম (৫৫) মিলনকে বাধা দিলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারনে তারা দুজনই ঘটনাস্থালে মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় এলাকাবাসি মিলনকে আটক করে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
[৫] এ ঘটনায় মিলনের ছোট ভাই হুমায়ন কবির বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯ তারিখ ২৫-১২-২০১৯। পুলিশ আটক মিলনকে ১৬১ ধারায় জবানবন্দী গ্রহন করলে মিলন তার মা-বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ মিলনকে আদালতে পাঠালে সে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মামুনুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। এঘনায় আদালত তাকে জেল হাজতে আটক রাখার নির্দেশ দেয়।
[৬] পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এসএম এনামুল হক তদন্তপূর্বক স্বাক্ষিদের জবানবন্দী রেকর্ড করে ২০২০ সালের ৩ জুন তারিখে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে পাঠানো হয়। এপর্যায়ে মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জর্জ সপ্তম আদালতে পাঠানো হয়। স্বাক্ষিদের স্বাক্ষ্য গ্রহন ও দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০২৪ সালের ৩০ জুন রবিবার বিচারক জনাব জুয়েল অধিকারী মামলার রায় প্রদান করেন। রায়ে আদালত মামলার একমাত্র আসামি হাবিবুর রহমান মিলন ওরফে মিলন উদ্দীন (৩২) কে ফাঁসির আদেশ প্রদান করেন।
[৭] রায় পাওয়ার পর মামলার বাদী হুমায়ন কবির সন্তোষ্টি প্রকাশ করে বলেন, জেল থেকে বিভিন্ন লোক ফিরে এসে আমাকে বলেছে মিলন যদি বের হতে পারে তাহলে আমাকেও মা-বাবার মতো খুন করে ফেলবে। সে কারনে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আজকে রায় পেয়ে চিন্তুামুক্ত হয়েছি। আদালত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
[৮] রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকা মিলনের চাচা আজিজুর রহমান বলেন, ভাই ভাবি হত্যার বিচার পেয়ে খুশি হয়েছি। তবে তাদের হারানোর বেদনাটা মনের মধ্যে থেকেই গেছে। বাদী হুমায়নের দাদা আব্দুল লতিফ পন্ডিত বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। আজ রায় শুনে খুশি হয়েছি।
[৯] চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, এই যে একটি ন্যায় বিচার হলো একারনে সকল অপরাধিদের জানা উচিৎ অপারাধ করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না। তিনি মামলা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
[১০] মামলা পরিচালনাকারি পাবলিক প্রসিকিউটার অ্যাড. সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, আসামির শাস্তির জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছি। আজ মামলার রায় পেয়ে ভালো লেগেছে। একজন অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনতে পেরে খুশি হয়েছি। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :