শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২৪, ১১:০১ দুপুর
আপডেট : ২৯ জুন, ২০২৪, ১১:০১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাউজানে পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য থেকে টাকা আয়

শাহাদাত হোসেন, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বর্জ্য থেকে টাকা আয় করছে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভা। ২০২১ সালে থেকে আধুনিক মডেল পৌরসভা গড়ার লক্ষ্য টাকা দিয়ে ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্য কিনতে শুরু করে। এই বর্জ্য থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে জৈবসার, মাছ, হাঁস, মুরগির খাদ্য ও প্লাস্টিকের দানা।

রাউজানের সংসদ সদস্য এবি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনায় পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ এই উদ্যোগ নিয়ে আজ পৌরসভাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব হিসাবে গড়ে তুলেছে। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। অস্থায়ী হাট বসিয়ে বাসাবাড়ির অপচনশীল আবর্জনা বস্তাভর্তি করে বিক্রি জন্য আনেন নারী-পুরুষরা। প্রতি বস্তা বর্জ্য দু'শ টাকায় কিনছেন রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ।এই বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে পৌর নয় নম্বর ওয়ার্ডে দুটি আলাদা ধারায় আয় বর্ধক প্রকল্প করেন তিনি।মেয়র এই উদ্যোগ নেওয়ায় অনেক মানুষের আয় রোজগারের সুযোগ হয়েছে। 

পৌর নয়টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার খাবারের উচ্ছিষ্ট, পচা ফলমূলের বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিদিন নারী ও পুরুষদের কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনে নেন মেয়র।এই বর্জ্য বিক্রি তাদের আয় হয় হাজার হাজার  টাকা। তাদের সে অর্থ নিজেদের সংসারের পাশাপাশি সন্তানদের লেখা-পাড়ায় ব্যয় করছেন তাঁরা।নয়টি ওয়ার্ডের কয়েক শতাধিক ডাস্টবিনের বর্জ্য নির্ধারিত স্থান থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন পৌরসভার আয় বর্ধক প্রকল্পে। এসব বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের কেউ হেঁটে চলেন আবার কেউবা ভ্যান নিয়ে রাউজানে চষে বেড়ান। তাদের পৌরসভার থেকে দেওয়া হয় বেতন। 

অপচনশীল প্লাস্টিককে রিসাইক্লিং করে নানা রঙের নিত্যব্যবহার্য পণ্য তৈরি এবং পচনশীল বর্জ্য  কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করছে কালো সৈনিক পোকা বা ব্লাক সোলর্জাস। অপচনশীল প্লাস্টিক থেকে ১২ ধরনে দানা তৈরি করা হয়। আর বর্জ্য থেকে পোকা ও জৈবসার তৈরি করা হয়।ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই উৎপাদন সম্পর্কে দায়িত্ব থাকা মো: সালাউদ্দিন বলেন, মশারির তৈরি একপ্রকার জালের ভেতরে মাছিগুলো থেকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। ডিম সংগ্রহ করে তা ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে হ্যাচিং করতে হয়। তারপর ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেয়ার পর ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তা পরিপূর্ণ হলে মাছ, হাঁস ও মুরগির খাবারের উপযোগী হয়।আর যেসব লার্ভা বেঁচে থাকে সেগুলো যে মল ত্যাগ করে সেটি আবার জৈব সার হিসেবে শাক-সবজি ও ফসলের মাঠে ব্যবহার করা হয়।উৎপাদিত প্রতি জৈবসার বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা। পোকা বিক্রি হচ্ছে কেজি-প্রতি ২০- ৩০ টাকায়। 

তিনি আরো জানান, পৌরসভার উৎপাদিত জৈবসার উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে প্রায় ১৪ হাজর ২৫০কেজি প্রদান করা হয়।পর্যায়ক্রমের চলছে কেনাবেচা।ব্ল্যাক সোলজার প্রকল্প পরিদর্শনে আসা চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নাছির উদ্দীন বলেন, 'ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদন করার পর বর্জ্যের যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্টমানের জৈব সার। রাউজান পৌরসভার উৎপাদিত এ জৈবসার কৃষিতে ভূমিকা রাখবে। কৃষকরা ফসলি জমিতে এ জৈবসার ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন করতে খরচ কমবে, ফলনও হবে ভালো। 

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্রকল্পের পরিচালক হারুন অর চৌধুরী টিপু বলেন, '১২ধরনের প্লাস্টিক দানা এ প্রকল্পে তৈরি হয়, প্রতিটি দানার দাম আলাদা আলাদা। প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।ইতিমধ্যে ১৫ টন প্লাস্টিকের কাঁচামাল বিক্রি করা হয়েছে। প্রস্তুত আছে আরও ৩টনের বেশি প্লাস্টিক দানা। যার বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।রাউজান পৌরসভার এই  প্রকল্প এখন গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পরিদর্শন করে গেছে দেশি-বিদেশি গবেষকরা। এই পৌরসভার কর্মসূচি গুলো দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়ে উঠেছে। 

ইতোমধ্যে এই পৌরসভাকে অনুসরণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দিয়েছেন।রাউজানকে রোল মডেল ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় চিঠিও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী অনেক আগেই রাউজান উপজেলাকে পিংক, ক্লিন ও গ্রিন সিটি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তার অনুপ্রেরণায় আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা আজ ফল দিচ্ছে। বাসাবাড়ি ও কুড়িয়ে আনা ময়লা আবর্জনাকে রিসাইক্লিং করে প্লাস্টিকের দানা ও মাছ চাষের খাদ্য পোকা, জৈবসার রপ্তানি করা হচ্ছে। রিসাইক্লিং কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদন করছে এবং রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। পৌরসভা যেমন লাভবান হচ্ছে সাথে সাথে অসহায় নারী পুরুষরা লাভবান হচ্ছে। তারা আবর্জনা কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে, যে টাকা আয় করে,তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়