খাদেমুল বাবুল, জামালপুর: [২] জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বাঁশ পাইলিং এর কাজ করছেন এলাকাবাসী। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাসহ বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের প্যোলাকান্দি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন ।
[৩] আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই ভাঙন রোধে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে মাধ্যমে বাঁশের আঁড়া আঁড়ি বাঁধ নির্মাণ শুরু করছেন। গত এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এলাকাবাসী নিজেদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাজ করছেন।
[৪] স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৪ সালে এই এলাকাটি প্রথমে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রায় অর্ধশত বছরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের প্যোলাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, ফারাজীপাড়া, মাদারের চর, মদনের চর ও গুমের চর গ্রামের অধিকাংশ এলাকা নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
[৫] বন্যা মৌসুমে নদের পানির প্রচন্ড তোড়ে অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি বিলীন হয়। যুগ-যুগ ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন রোধে সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী।
[৬] তাই স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগেই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে সীমিত সাধ্যের মধ্যে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করছেন। বিষয়টি স্থানীয় এমপি, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অবগত করা হয়েছে বলে জানায় স্বেচ্ছাসেবকরা।
[৭] দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান বলেন, স্থানীয় লোকজন নিজেদের অর্থে বাঁশ কিনে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং করছেন। অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজনের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সাতটি বাঁশের পাইলিং বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতিটি বাঁশ পাইলিং নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এতে তাঁদের প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হবে।
[৮] সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ কেটে এনে নদের ভাঙনকবলিত এলাকায় বাঁশের পাইলিং করছেন। আর এই কাজে যোগ দিয়েছেন এলাকার বয়স্ক, যুবক, তরুণ ও কিশোররাও। তাঁদের মধ্যে কেউ পাইলিং করছে, কেউ বাঁশ কাটছে। আবার কেউবা এক বাঁশের সাথে আরেক বাঁশ বাঁধছেন। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের কাজ করছেন। প্যোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)সাবেক সদস্য আহাম্মদ আলী
[৯] বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে আমাদের এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। তাঁর নিজের ঘরবাড়িও না কি ৯ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট বার বার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পায়নি তাঁরা। তাই বাধ্য হয়েই শেষ সম্বল রক্ষায় নিজেরাই বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছন।
[১০] মধ্যপাড়া বাসিন্দা মো. আনোয়ার শেখ বলেন, আমরা নিজেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশ ও টাকা সংগ্রহ করে এই বাঁধ দিতাছি। কেউ বাঁশ, কেউ টাকা আবার কেউ নিজেরা শ্রম সহযোগিতা করছেন। যাঁর যেমন সাধ্য, সেভাবেই কাজ করেছেন। আমি নিজে শ্রম দিয়ে বাঁধ নির্মাণে কাজ করছি।
[১১] বাহাদুরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাজাহান মিয়া বলেন, প্রতিবছর শত শত মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভাঙন রোধে সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যখন ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে, সেই সময় কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের পাইলিং করার বিষয়টি তিনি জেনেছেন বলে জানান এই জন প্রতিনিধি। তিনিও এলাকাবাসীর এই কাজে সহযোগিতা করবেন বলে জানান ।
[১২] দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে স্থানীয়দের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে।
[১৩] জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এবং সদর উপজেলার বুক চিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। শুস্ক মৌসুমে মরা খাল আর বর্ষা মৌসুমে আগ্রাসী রূপ। যার করাল গ্রাসে অতিষ্ঠ হয়েছে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নবাসী ।
[১৪] বাহাদুরাবাদ ইউপির সাবেক সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আহম্মদ আলীর নেতৃত্বে পোল্লাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবারের সদস্যরা মিলে এই বাঁশ সংগ্রহ করে বাঁশের গাটার তৈরি করছেন।
[১৫] স্থানীয় আলম মিয়া, মো.বাসেদ আলী, মো. বুদু মিয়া বলেন এই গাটার না দিলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এবং দুইশ একর জমি ফসল নষ্ট হবে তাই আমরা স্থানীয় এমপির কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়াও পোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নবনির্মিত পোল্লাকান্দি উত্তরপাড়া জামে মসজিদ ও গোরস্থান নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
[১৬] জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্যোলাকান্দি এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের যে অংশে ভাঙন আছে। সেখানে ভাঙন রোধে ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরন করা হয়েছে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :