সুজিৎ নন্দী: বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে শিঘ্রই ৩২ তলাবিশিষ্ট জাহাজ চলাচল শুরু হবে চট্টগ্রাম-জেদ্দা নৌরুটে। দেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লিমিটেড এই রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। জাহাজটির পরিচালনায় একটি নীতিমালা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এটি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও সম্ভবতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অনেক কম খরচে হজ করতে পারবেন। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের জন্য খুবই ভালো হবে। এটি নিয়ে পর্যাবেক্ষণ কাজ চলছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় একাধিক বৈঠক ও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটি নিয়ে কাজ চলছে। খুব শিঘ্রই চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাহাজে করে সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এমএ রশিদ বলেন, কোম্পানিটি জাহাজটি আনার অনুমোদন পেলে, এটি আটদিনে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরব যাত্রী নিয়ে যাবে। আগে সমুদ্রপথে সৌদি আরব যেতেও এক মাসের মতো লাগলেও, এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ জাহাজগুলি উচ্চ গতিতে চলাচল করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের খরচ-সাশ্রয়ী উপায়ে ভ্রমণের বিকল্প দিতে পারব। সাগরপথে যাত্রাকালে কোনো অসুবিধা ছাড়াই জাহাজে নামাজ আদায় করতে পারবেন হজযাত্রীরা। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই যা করা যায় না।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, হজযাত্রী বহনে জাহাজ চালুর বিষয়ে আমরা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি বৈঠকের সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। সারা বিশ্বে ১০টি ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি রয়েছে, যারা জাহাজের ফিটনেস, রিপেয়ার, পরিচালনাসহ সবকিছু দেখে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়ে থাকে। ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি অনুমোদিত ৩২ তলাবিশিষ্ট একটি পুরাতন জাহাজ আমদানি করব। এতে একসঙ্গে ৩ হাজার হজযাত্রী বহন করা যাবে। জাহাজে বিশাল একটি মিলনায়তন থাকবে, যেখানে একসঙ্গে ২ হাজার হজযাত্রী বসতে পারবেন। ১৪-১৫ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন জাহাজ নির্মাণ করতে ৫ হাজার কোটি টাকা লাগে। আমরা ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জাহাজ আমদানি করবো। হজে বিমান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। জাহাজে যাত্রী আনতে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা ছাড় দিতে হবে।
তিনি জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির অনুমোদন থাকা সাপেক্ষে ক্রুজ জাহাজ আমদানি করা যাবে। আমাদের প্রস্তাব, বছরে দুমাস হজযাত্রী বহন করবে জাহাজটি। বাকি ১০ মাস এশিয়ার বিভিন্ন রুটে যাত্রী নিয়ে চলবে। হজ মৌসুমে ভালো সাড়া পেলে জাহাজ ভাড়া করে আনা হবে। হজ শুরুর সাত দিন আগে জাহাজ যাত্রা করলে সৌদি আরব গিয়ে ৭-৮ দিন হোটেল ভাড়া করে থাকতে হবে না। এখানেও হজযাত্রীদের এক-দেড় লাখ টাকা বাঁচবে।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আশা করছেন, জাহাজ চালু হলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলবে। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া গেলে আগামী হজ মৌসুম থেকেই তাঁরা জাহাজ চলাচল শুরু করতে চান।
কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স এশিয়ার অন্যতম ড্রেজার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এপর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্যের ড্রেজার তৈরি করেছে। সম্প্রতি কোম্পানিটি কর্ণফুলী ড্রাই ডক লিমিটেড নামক চট্টগ্রামে দেশের প্রথম প্রাইভেট জেটি নির্মাণ করেছে।
এসএন/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :