মোস্তাফিজার বাবলু, রংপুর: পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রংপুর। ফলে অচল হয়ে পড়েছে আন্তঃজেলা যোগাযোগ। মহাসড়কে নছিমন-করিমনসহ অবৈধ যানচলাচল বন্ধ ও রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে প্রশাসনিক হয়রানির প্রতিবাদে রংপুরে এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মোটর মালিক সমিতি।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) ভোর ৬টায় শুরু হয়েছে ধর্মঘট। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচল।
ধর্মঘটের কারণে রংপুর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সড়কগুলোতে। দূর পাল্লা ও আন্তঃজেলার পরিবহন না চলায় গন্তব্যে যেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে ছাড়া দু একটি বাস সকালে রংপুরে পৌঁছেছে। এরপর আর কোনো বাস রংপুরে পৌঁছায় নি। এমনকি রংপুর থেকে একটি বাসও ছেড়ে যায়নি।
রাজশাহীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রংপুরের
রাজশাহীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রংপুরের। রাজশাহী-রংপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহী থেকে রংপুরের বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পরিবহন মালিকরা শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, রংপুর পরিবহন মালিকরা বাস বন্ধ রাখতে বলেছেন, তাই এমনটা করা হয়েছে।
বগুড়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রংপুরের
বগুড়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রংপুরের। রংপুরের বাস মালিকদের ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার সকালে রাজশাহী বিভাগের জেলা বগুড়া থেকে রংপুর রুটের সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বগুড়া বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন মালিক সমিতি।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি শুক্রবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের পরিবহন নেতাদের কথায় রংপুর রুটে বাস বন্ধ রেখেছেন তারা।
নীলফামারীর সঙ্গে রংপুরের বাস যোগাযোগ বন্ধ
রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটে অচল উত্তরের জেলা নীলফামারী। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। মহাসড়কে নসিমন, করিমন, থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ এবং রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে ‘প্রশাসনিক হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহনের এই সংগঠন।
শুক্রবার সকালে সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, পরিবহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্তের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো বাস। সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেছে, শনিবার রংপুরে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করতে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করা হয়েছে। আমরা রাজনীতি করি না, তাহলে কেন এই দুর্ভোগ?
রংপুর থেকে ছেড়ে যায়নি একটি বাসও
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দু-একটি বাস সকালে রংপুরে পৌঁছালেও রংপুর থেকে কোনো বাস ছাড়েনি। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের পাশাপাশি আন্তঃজেলা পরিবহনের বাসও বন্ধ রয়েছে। রংপুর থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না। অন্য জেলা থেকেও বাস আসছেও না। বাস না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে চড়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। বিকল্প পন্থায় গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। এতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচও। মালামাল পরিবহন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে টানা দু’দিনের ধর্মঘটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনো নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এ জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে সভা করে রংপুরের সকল সড়ক পথে ওই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।
রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সরকারি দলের মূল উদ্দেশ্য সমাবেশে আসা লোকজনকে বাধা দেওয়া। পরিবহন ধর্মঘট কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসা ঠেকাতে পারবে না। পূর্বের সমাবেশগুলোর উপস্থিতিই তার প্রমাণ।
আপনার মতামত লিখুন :