শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ০৩:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডেমু ট্রেন কেনা ও সংস্কারে তেলেসমাতি 

ডেম্যু ট্রেন

আনিস তপন: ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে চীন থেকে কেনা হয় ২০ সেট ডেম্যু ট্রেন। অল্প দুরত্বে কম সময়ে অধিক যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে এসব ট্রেন কেনে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

কিন্তু চীন থেকে বাংলাদেশে ট্রেনগুলো আসার পরই শুরু হয় নানা সমালোচনা। প্রাক-পরিদর্শন থেকে শুরু করে যত্রী পরিবহন সব ক্ষেত্রেই শুরু হয় বিতর্ক।

এরই ধারাবহিকতায় পরবর্তীতে ক্রয় প্রক্রিয়াসহ আমদানি করা ডেম্যু ট্রেনগুলো বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহনের উপযুক্ত কিনা এ প্রশ্ন ওঠে। তা যাচাই-বাছাইয়ে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটি সেসময় প্রকল্প পরিচালকসহ বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংগঠিত নানা অনিয়মের প্রমাণসহ শাস্তির সুপারিশ করে। যদিও অভিযুক্ত কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এখনো কোন শাস্তি দেয়া হয়নি।

এবার অচল ডেম্যু মেরামত করে সচল করতেও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। মন্ত্রীসহ রেলওয়ের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দাবি এটা এক যুগান্তকারী সাফল্য। বিপরীতে অন্য আরো কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি অচল ডেম্যু সংস্কার/মেরামতের নামে লুটপাটের আয়োজন চলছে। তারা বলছেন, বছর বছর এসব মানহীন ডেম্যু ট্রেন সংস্কার/মেরামতের নামে সংশ্লিষ্ট শাখার অবৈধ অর্থ আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়াবে। 

রেলওয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ঊধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রেল কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি এক যন্ত্রপ্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের তত্বাবধানে ডেম্যু ট্রেনটি পার্বতীপুর কেলকাতে মেরামত হয়। গত ৯ অক্টোবর মেরামত করা এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক চলাচল উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

এ বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। রেলভবনের ৮ম তলার সভাকক্ষে আয়োজিত এই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও আলোচনা সভায় রেলপথমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক, অতিরিক্ত সচিব (সকল), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সকল), মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্নসচিব, মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব/পশ্চিম), সরকারি রেল পরিদর্শক, উপসচিব (প্রশাসন-২ও ৪) মন্ত্রী ও সচিবের দুই একান্ত সচিব, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট, আইসিটি সেল, বিঅগীয় তত্বাবধায়ক কারখানা (চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর) এবং প্রধান নির্বাহীকে কেলোকা পার্বতীপুরকে সভায় যোগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

এতেই শুরু হয় ফের বিতর্ক। বিজ্ঞপ্তিতে ২ জন বগি মেরামত বিশেষজ্ঞ ও ১ জন লোকোমোটিভ মেরামত বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ডাকা হলেও ডেম্যু ট্রেন বিষয়ে অভিজ্ঞ বা রেলেওয়ের কর্মরত মেকানিক্যাল প্রকৌশলী যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের কাউকে  ডাকা হয়নি।

তাছাড়া নতুন সংস্কার করা ডেম্যু ট্রেনের মেরামত কাজের অর্থ যোগান নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে রেল প্রশাসনে। অভিযোগ এটি মেরামতের আগে কে এই ট্রেনটি সংস্কার/মেরামতের অনুমতি দিয়েছে, এর অর্থ বরাদ্দ কিভাবে হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন সভায় যোগ দেয়া রেলের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আলোচনায় রেলপথ মন্ত্রীর সঙ্গে মেরামতের অনুমতি কে দিয়েছে ও এর অর্থ ব্যয় কিভাবে হবে এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন রেল সচিব। কারণ চলতি অর্থ বছরে রেল বাজেটে এ সংক্রান্ত কোন অর্থ বরাদ্দ নেই এবং এজন্য বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনাতেও এটি অন্তর্ভূক্ত নেই। 

একাধিক সূত্রের দাবি, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মূলত ডেম্যু ট্রেন মেরামতের প্রকল্প নিতে তোড়জোড় শুরু করেছে রেলের একটি অংশ। তবে এজন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও মেরামত করা ট্রেন কত দিন চলবে বা মেরামতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সভায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী প্রথমে ডেম্যু ট্রেনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন। 

অপর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসময় ডেম্যুর অপোরেটিং সিস্টেম মডিউল বেইজড ইলেক্ট্রনিক অপারেটিং সিস্টেম বলে জানান। এই অপারেটিং সিস্টেমকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমে কনভার্ট করতে হবে। বর্তমানে ডেম্যুর প্রকৃত অবস্থা কি? কোন অবস্থায় আছে? চাকার কি অবস্থা? বডি কেমন আছে?

মডিউল বেইজড অপারেটিং সিস্টেম থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমে কনভার্ট করতে হলে সম্ভাব্য খরচ হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয়।

আলোচনার এই পর্যায়ে ডেম্যু ট্রেনের সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুই চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও দুই ইলেকিট্রক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে যে প্রতিবেদন দেবেন, যদি কমিটি ডেম্যু ট্রেন মেরামতের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত মনে করে, তবে তা প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

একই সঙ্গে নতুন ঠিক করা ডেম্যু ট্রেনটি ঢাকা-নারায়নগঞ্জ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের বিষয়ে পরামর্শ দেন কয়েক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এর আগে এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকাতে দুই সেট ও চট্টগ্রামে তিন সেট ডেম্যু চলাচল করছে। অবশিষ্ট ১৫ সেট ডেম্যুর মধ্যে পার্বতীপুরে থাকা একটি অচল ডেম্যুকে মেরামতের মাধ্যমে সচল করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ সেট ডেম্যু অকেজো অবস্থায় আছে।

রেলওয়ের প্রকৌশলীরা এটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা পরে এর যন্ত্রাংশ সংগ্রহের লক্ষ্যে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এতে দেখা যায় কেনার সময় যে ব্যয় হয়েছে, মেরামত করতে গেলেও প্রায় একই সমান ব্যয় হবে। অথচ বাইরেরর কোম্পানির দেয়া মূল্য তালিকা থেকে প্রায় ১০গুণ কম মূল্যে এটি মেরামত করা গেছে। এই ট্রেন চালাতে চীনারা ২০ জোড়া ব্যাটারি ব্যবহার করেছে। এই ২০ জোড়া ব্যাটারির বর্তমান মূল্য প্রায় ৬/৭ লাখ টাকা। সেখানে মাত্র এক জোড়া ব্যাটারি দিয়ে নতুন মেরামত করা ডেম্যু পরীক্ষামূলকভাবে চালানো সম্ভব হয়েছে। 

তিনি জানান, রেলওয়ের সারাবছরের যে মেইনটেনেন্স কস্ট আছে সেখান থেকেই এই ব্যয় করা হয়েছে। রেলওয়ের স্বাভাবিক যেসব পরিবহন আছে তারচেয়ে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারিগরি সম্পন্ন। এটা একবারেই ভিন্ন একটি প্রযুক্তি এই দেশে।

আলোচনা সভায় মেকানিক্যাল প্রকৌশল বিভাগ থেকে কাউকে ডাকা হয়নি। পাওয়ার প্রেজেন্টেশন আলোচনায় যাদের ডাকা হয়েছে তারা সবাই নন-টেকনিক্যাল। তো এই আলোচনা সফল হবে কিভাবে জানতে চাইলে মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, এটি নেগেটিভ ভাবে চিন্তা না করে রেলের এই সফলতাকে পজেটিভ ভাবে দেখার কথা বলেন। সম্পাদনা: রাশিদ 

এটি/আর/এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়