শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৮:০৩ রাত
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার টপ টেনে স্থান পাবে বাংলাদেশ বিমান

বিমান এয়ারলাইন্স

ডেস্ক রিপোর্ট: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ২০৩০ সালের মধ্যেই এশিয়ার টপ টেন এয়ারলাইন্সে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিমানের বর্তমান বহর দ্বিগুণ করা, আরও অন্তত দশটি গন্তব্য চালু করা ছাড়াও বিশ্বমানের যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা হবে।

বিমানের ঊনপঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে এমন তথ্যই প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন। তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, আগামী দশ বছরের মধ্যেই এশিয়ার টপ টেন এয়ারলাইন্সের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বিমানকে।

এজন্য নেয়া হচ্ছে বিশাল কর্মপরিকল্পনা। মূল কথা হচ্ছে, বিশ্বমান অর্জনের রূপকল্প সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে। সোমবার ছিল বিমানের ঊনপঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর টানা পঁয়ত্রিশ বছর বিমান ছিল সরকারের কর্পোরেশনভুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

এ সময়ের মধ্যে বিমান বরবরাই ছিল লোকসানের কবলে। যদিও আশির দশক ছিল বিমানের জন্য সবচেয়ে সোনালি সময়। ওই সময়ের আলোচিত ব্র্যান্ডনিউ ৫টি ডিসি-১০ প্লেন দিয়ে বিমান দাপিয়ে বেড়িয়েছে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে। জাপানের নারিতা থেকে শুরু করে সাত আটলান্টিকের ওপার নিউইয়র্কসহ ২৯টি গন্তব্যে ছিল বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে শুরু হতে থাকে একের পর এক রুট বন্ধের কূটকৌশল। সর্বশেষ ২০০৬ সালে লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয় এয়ারলাইন্স দুনিয়ার সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস রুট। যা আজও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন শেখ নাসির আহমেদ বলেন, নিউইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। লোকসান হলেও সেটা বিকল্প কায়দায় চালু রাখলে আজকে পরিস্থিতি হতো ভিন্ন। কিন্তু কালের ব্যবধানে আজ এটা প্রমাণিত নিউইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধ করে কফিনের সর্বশেষ পেরেক মারা হয়েছে। একদিকে আমলাতান্ত্রিক দাপট অন্যদিকে হঠকারী সিদ্ধান্তের দরুন বিমানের যখন মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা তখন। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই বিমানকে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় যা সম্পূর্ণভাবে সরকারী মালিকানাধীন এবং এটি ১৩ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্যদ দ্বারা পরিচালিত হয়।

কোম্পানি হবার পর বিমান পর্ষদের প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি দায়িত্ব নিয়েই কঠোর হস্তে বিমানের দীর্ঘদিনের জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্য দুর্নীতি, অপচয়, পাইলটদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ইউনিয়নের লাগাম টেনে ধরেন।

বিশেষ করে তার আমলে পাইলটদের হাতে জিম্মি থাকার দৈন্যদশা থেকে বিমানকে রক্ষা করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় তাকেও বড় ধরনের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়। হঠাৎ করে তুচ্ছ অজুহাতে পাইলটদের কর্মবিরতি ও পরে তাদের মদদে বিমানকর্মীরা এয়ারপোর্ট বন্ধ করে বিমানকে বিপাকে ফেলে দেন। কিন্তু নতি স্বীকার করেননি তিনি। তারপর টানা ছয় বছর তিনি বিমানের আয়রন ম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং দায়িত্ব ছাড়ার শেষের দুবছর অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বিমানকে লাভের ধারায় ফিরিয়ে আনেন। বিশেষ করে তার সিদ্ধান্তেই বিমান পায় কেভিন ও কাইলের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিদেশী সিইও।

এতে বিমান ফের আলোচনায় আসে। কিন্তু এয়ারমার্শাল জামালের বিদায়ের পর ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন পাইলটরা এবং একে একে সব আর্থিক দাবি আদায়ে মেতে ওঠেন। এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, বিমানের পাইলটদের বেতন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক শ’র মধ্যে বিমানের অবস্থান না থাকলেও পাইলটদের বেতনের কাঠামো সবার শীর্ষে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতে এয়ারইন্ডিয়ার চেয়ে বিমানের পাইলটদের বেতন ভাতাদি অনেক এগিয়ে। এমন তুঘলকি বেতন কাণ্ডেই বিমান ফের লোকসানের মুখে পড়ে।

এ অবস্থায় বিমানের ব্যবস্থাপনায় আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার মোঃ মোকাব্বির হোসেন এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে সরকারের আরও ক’জন কর্মকর্তা হাল ধরেন। তারাও বিমানের নানা ধরনের অনিয়ম অরাজকতা ও অপচয় বন্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেন।

তারই ধারাবাহিকতায় বিমানের বর্তমান পর্ষদ আগামী দশ বছরের মধ্যে বিমানকে এশিয়ার সেরা দশে উঠে আসার কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেন। বিমান জানিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ১৯টি শহরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গন্তব্য রয়েছে। বিমান বহরে মোট ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে যার মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিম লাইনার, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিম লাইনার, ৬টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে বিমানের বহর যেকোন সময়ের তুলনায় তারুণ্যদীপ্ত। আগামী দশ বছরের মধ্যে এই বহর দ্বিগুণ করা হবে ।

নিউইয়র্কসহ আরও অন্তত দশটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে সোমবার ঊনপঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। করোনা মহামারীতে সোমবার বলাকায় সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা ও সংস্থার নিজস্ব পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন এবং বিমানের পরিচালকবৃন্দ, পদস্থ কর্মকর্তা ও সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় প্রধান কার্যালয়ের লবিতে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পূর্তির উদ্বোধন শেষে ৫০তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা করা হয়। এরপর মোনাজাতে বিমানের সকল পর্যায়ের উত্তরোত্তর উন্নয়ন, সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা, করোনা মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ মোকাব্বির হোসেন বিমানের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বক্তব্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং সেবাধর্মী আচরণ নিয়ে জাতীয় এয়ারলাইন্সকে বিশ্বের অন্যতম এয়ারলাইন্সে উন্নীত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে যেখানে বিশ্ববিখ্যাত বিমান সংস্থাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে স্বল্প পরিসরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চার্টার্ড, বিশেষ, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। কিছুটা ব্যয় সঙ্কোচন করে হলেও বিমান তার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে যাচ্ছে। কোভিডের কারণে বিমান এখন পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করেনি। বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সূত্র: এভিয়েশন ওন নিউজ বিডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়