শিরোনাম
◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা ◈ মণিপুরের সহিংসতায় মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট, ২০২২, ১০:২৮ দুপুর
আপডেট : ০৯ আগস্ট, ২০২২, ১০:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেলপথ পূনর্বাসণ প্রকল্প নিয়ে হতাশ পরিবেশ মন্ত্রী

১০ বছরে ব্যয় বেড়েছে ৪২৭ কোটি টাকা

কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেলপথ পূনর্বাসণ প্রকল্প

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার: গতি নেই পূর্বাঞ্চলীয় জোনের কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেলপথ পূণর্বাসন প্রকল্পে। দেশে ৮ বছরে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও ভারত- বাংলাদেশ যৌথ অর্থায়নের এই প্রকল্পে কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। গত ১০ বছরে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। সরকার বার বার চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিলেও রহস্যময় কারণে প্রকল্পে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি এ পর্যন্ত ৩ বার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। এতে ১১৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ’ ৪৫ কোটি টাকায়। দুই বছর মেয়াদের এই প্রকল্পটি আরও ৫ বছরে শেষ হবে কি না এ নিয়েও সংশয়ে ভোগছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা মৌলভীবাজার -১ (জুড়ী -বড়লেখা) আসনের সংসদ সদস্য বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাবুদ্দিন আহমদ সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে মুঠোফোনে 'আমাদের অর্থনীতি' ও 'আমাদের সময় ডটকম'কে বলেন, কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেলপথ পূণর্বাসন প্রকল্পের চলমান কাজ নিয়ে আমি অনেক হতাশ। সংশ্লিষ্ট  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইলে প্রকল্পটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই উদ্বোধন করা যেতো। কিন্তু করোনার অজুহাত দেখিয়ে তারা বার বার সময় বাড়িয়ে নিয়ে আমাদের অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর চালু হয় কুলাউড়া-শাহবাজপুর- মহিষাধন (করিমগঞ্জ, ভারত) রেলপথটি। এই রেলপথে আসাম- বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন ও লোকজন চলাচল করতেন। সর্বশেষ ১৯৫৮-৬০ সালে ওই রেলপথটি পুনর্বাসন করা হয়।

পরবর্তীতে  কুলাউড়া-শাহবাজপুর পর্যন্ত লাতুর ট্রেন নামে একটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করতো। তবে বাজেট স্বল্পতার কারণে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এক সময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে দেশের প্রাচীণ এই রেলপথটি। ঝুঁকিপূর্ণ রেল লাইনে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনায় ট্রেন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এই অজুহাত দেখিয়ে তৎকালীন বিএনপি -জামায়াত জোট সরকার ২০০২ সালের ৭ জুলাই এই রেলপথে সবধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ ১০৬ বছর চালু থাকা এই রেলপথ। বেদখল হতে থাকে রেলের কোটি কোটি টাকার জমি স্থাপনা।

অপরদিকে, সড়কপথে ভাড়া বেশি হওয়ায় এলাকাবাসীর যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ খরচও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী,  বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর এই ৬টি রেলওয়ে স্টেশন স্থবির হয়ে পড়ে। ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মৌলভীবাজার -১ (জুড়ী -বড়লেখা)'র সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিন আহমেদ সরকারি দলের হুইপ মনোনীত হন। তখন এলাকাবাসী রেলপথটি চালু করার জন্য তার কাছে জোরালো দাবি জানায়।

এরই প্রেক্ষিতে পণ্য পরিবহণ এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ২০১০ সালের পর ভারত ও  বাংলাদেশ বন্ধ এই রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেয়। ২০১১ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। তখন ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা। কিন্তু সময় মতো কাজ শুরু না হওয়ায় আবার তা থেমে যায়। ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)'র সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অনুমোদিত প্রকল্প পরবর্তীতে একনেক'এ সংশোধন করে ব্যয় কমিয়ে ৫শ’ ৪৪ কোটি টাকা করা হয়।
প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাহবাজপুর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার রেলপথ (মেইন লাইন) ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইন মিলে মোট ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ। ব্রডগেজ ও মিটার গেজের দ্বৈত লাইন নির্মাণ  ছাড়াও রয়েছে ৬টি রেলওয়ে স্টেশন এবং ৫৯টি সেতু কালভার্ট নির্মাণ। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে রেলপথটি পুনর্বাসনের জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ'র সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আর চুক্তির মেয়াদ কাজ শুরুর তারিখ থেকে ২৪ মাস। উক্ত প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের 'বালাজি রেল রোড সিস্টেমস' নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া–শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পটির কাজের যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় রয়েছে, এই লাইন চালু হলে ভারত বাংলাদেশ আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। এছাড়া এই রেলপথ দিয়ে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত ৫টি লোকাল ও আন্তনঃগর  ট্রেন চলাচল করবে। একই সঙ্গে ভারতীয় ট্রেনও নিয়মিত এই পথে চলাচল করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা ‘আমাদের অর্থনীতি’ ও ‘আমাদের সময় ডটকম’কে জানান, চুক্তি সম্পাদনের পর কাজ শুরু করতে গড়িমসি শুরু করে কালিন্দি। রেললাইন বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়।

২০২০ সালের মে মাসে উক্ত কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওই সময়ে কাজ হয় মাত্র ১৭ শতাংশ। পরে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়। এতে দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় ৯ নভেম্বর ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকা অফিসে ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা ও ঠিকাদারের উপস্থিতিতে আবারও একটি  বৈঠক হয়। সে মোতাবেক ১৮ নভেম্বর 'কাজ চলমান না থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। চিঠির জবাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি করোনার অজুহাতসহ নানা বাহানা তুলে ধরে। এতো কিছুর পরও কাজ শুরু না করায় চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে অজানা কারণে গত বছরের অক্টোবরে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয় মাস। এরপর পুনরায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ এ পর্যন্ত ৩ বারে দুই বছর বৃদ্ধি করা হলেও কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। ২০২২ সাল পর্যন্ত পুনরায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও গত ডিসেম্বর থেকে আরও ৭  মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কাজের পরিমাণ এখনও ২৫ শতাংশেই আছে। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের কালিন্দি রেলনির্মাণ কোম্পানি সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

এই প্রকল্পে নিয়োজিত বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সময় ডটকম’কে বলেন, বর্তমানে ব্রিজ কালভার্টের কাজ শুরু করা হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনগুলোর কাজও চলমান। 

কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেললাইন পূণর্বাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হায়দার আলী আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সময় ডটকম’কে  জানান, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানিকে ৩ দফায় ২ বছর সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলমান অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ হবে।  সম্পাদনা: হ্যাপী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়