মনিরুল ইসলাম : সৌদি আরবগামী ফ্লাইটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট ভাড়া ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আটাবের একটি প্রতিনিধি দল সরকারের এই উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেন।
আটাবের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ।
সাক্ষাৎকালে আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বিমানের যাত্রীদের টিকিট প্রাপ্তি সহজ ও স্বল্প মূল্যের করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের আইন পরিবর্তন করে এয়ারলাইন্সগুলোকে বাধ্যতামূলক ভাবে জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নামক যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে এই খাতে সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে যাত্রীরা যেমন অধিক মূল্যে টিকিট ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন তেমনি ভোগান্তিও বাড়ছে।
সম্প্রতি সরকার যাত্রীদের পাসপোর্ট ডিটেইল ছাড়া টিকিট বুকিং এর পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা অনিয়ম এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে আটাবের সভাপতি বলেন, এখন সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন প্রতিষ্ঠান এই আইনের ব্যত্যয় ঘটাতে না পারে।
এসময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একদিনের বৈঠকে সকল সমস্যা শুনে তার সমাধানের পথ খুঁজে বের করে নতুন সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল । এখন এই সিদ্ধান্ত যাতে কেউ উপেক্ষা করতে না পারে তার জন্য আমরা কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করছি।”
২০১৭ সালের আইনটিকে পরিবর্তনের পক্ষে তার মতামত থাকবে জানিয়ে তিনি আইন ও বিধি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য আটাবকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক জন্য পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত আকাশপথের যাত্রায় টিকেটের উচ্চমূল্য কমানো ও এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে।
এতে টিকেট বুকিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা বরাদ্দ করা না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুকিং বাতিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি গ্রুপ বুকিংয়ের নামে কোনো এয়ারলাইন্সের অনেকগুলো টিকেট একসঙ্গে ব্লক করা হলে পরে সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ তা বিক্রি নিশ্চিত করার তথ্য দিতে বলা হয়। তা না হলে পরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেসব টিকেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করতে হবে এয়ারলাইন্সকে।
যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের বিবরণ ও পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে টিকেট বুকিংয়ের নির্দেশনার ফলে যেসব টিকেট নাম ছাড়া ‘ব্লক’ করে রাখা হত সেগুলো এয়ারলাইন্সগুলো ‘ওপেন’ করে দেয়। ফলে কম্পিউটার রিজারভেশন সিস্টেমে সিট সহজলভ্য হয়ে যায়। এতে এখন ট্রাভেল এজেন্সি ও যাত্রীরা ফ্লাইটে সিট খালি আছে কি না এবং কত ভাড়া তা অনলাইনে দেখতে পাচ্ছেন। সব দেখেশুনে চাহিদা মত টিকেট বুকিং করতে পারছেন যাত্রী এবং এজেন্সিগুলো।
এ পরিবর্তনের ফলে বাজারে টিকেটের যে কৃত্রিম সংকট ছিল সেটা কমে গেছে এবং ফ্লাইটের সিট সহজলভ্য হওয়ার কারণে এয়ারলাইন্সের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে ও টিকেটের মূল্য কমে এসেছে।