অবশেষে আলোর মুখ দেখছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (মেট্রোরেল) লাইন-৫। গাবতলী থেকে দাসেরকান্দি ভায়া টেকনিক্যাল-কল্যাণপুর-শ্যামলী-কলেজ গেট, আসাদ গেট-রাসেল স্কয়ার-কারওয়ানবাজার-হাতিরঝিল-তেজগাঁও-আফতাব নগর-আফতাব নগর সেন্টার-আফতাব নগর পূর্ব-নাসিরাবাদ রুট এ লাইনের অন্তর্ভুক্ত।
লাইন-৫ নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। সেগুলো সংশোধন করেই আজ সোমবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প পাঠাবে পরিকল্পনা কমিশন। একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। খবর পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) সাউদার্ন রুটের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)
মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্পটি ঢাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। মেট্রোরেলের সুফল তখনই পাওয়া যাবে, যখন সব লাইন চালু হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, ম্যাস র?্যাপিড ট্রানজিটের মাধ্যমে ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিম করিডরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন; শহরে ট্র্যাফিক জ্যাম হ্রাসকরণ; পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এ নগরীর বাসিন্দাদের জন্য আধুনিক ও নিরাপদ ট্রানজিট ব্যবস্থার প্রবর্তন হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৭২১ কোটি ৪৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এতে বড় অর ঋণ সহায়তা দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। এই দুই উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৩২ হাজার ৩৩২ কোটি ৯২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা দেবে। অবশিষ্ট ১৫ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প হিসেবে এমআরটি লাইন-৫ (সাউদার্ন রুট) নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, ডিটেইল্ড ডিজাইন, টেন্ডার সহায়তা, ভূমি অধিগ্রহণ প্ল্যান ও পুনর্বাসন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির লক্ষ্যে এডিবির অর্থায়নে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং এ প্রকল্প থেকে আলোচ্য উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোট ৫৪ হাজার ৬১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (জিওবি ১৫ হাজার ৪৮০ কোটি ৭০ লাখ ২১ হজার টাকা এবং প্রকল্প ঋণ-৩৯ হাজার ১৩৮ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা) প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০৩০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য আলোচ্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে প্রকল্পটির ওপর ২৩ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আলোচ্য প্রকল্পটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে পুনরায় যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনার লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ডিপিপি পাঠালে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে মোট ৪৭ হাজার ৭২১ কোটি ৪৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা (জিওবি-১৫ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং এডিবির ঋণ-৩২ হাজার ৩৩২ কোটি ৯২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা) প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০৩১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য আলোচ্য প্রকল্প প্রস্তাব পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান প্রকল্প প্রস্তাবে পূর্বের পিইসি সভায় উপস্থাপিত প্রকল্প ব্যয় থেকে মোট ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা (জিওবি-৯২ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার এবং প্রকল্প ঋণ-৬ হাজার ৮০৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা) ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পাশাপাশি বলেছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিবেচনা করে এসব বড় প্রকল্প গ্রহণের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশীয় ও বৈশি^ক আর্থিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমাদের সে সক্ষমতা রয়েছে কি না তা-ও বিশদভাবে পুনঃপর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নিকট ভবিষ্যতে যেসব ঝুঁকি সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে, সেসবের বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ সামগ্রিকভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান ও এর ঝুঁকিগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে আলোচ্য বিষয়ে অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মতামত জানা প্রয়োজন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভাষ্য, আরএসটিপি-২০১৫ অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬টি পৃথক মেট্রো লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা আছে। ইতোমধ্যে আবার ইউআরএসটিপি প্রক্রিয়াধীন এবং প্রকাশের শেষপর্যায়ে রয়েছে। ইউআরএসটিপিতে কি ধরনের পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে, কোন প্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নির্ধারণের ভিত্তি এবং বৈশ্বিক ও দেশীয় সর্বশেষ বাস্তবতার আলোকে আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়েছে কি না, তাও জানা প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকের জন্য ১ হাজার ৬২৩ কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট প্রাক্কলনের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। বর্তমান প্রকল্পের অধীনে ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিটেইল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, প্রকিউরমেন্ট/ টেন্ডার ডকুমেন্ট, প্রজেক্ট কনস্ট্রাকশন সুপারভিশনের জন্য এত বেশি পরামর্শক ব্যয় প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।