মনজুর এ আজিজ : হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনী (২০২৫-২০২৭) প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। পুরোদমে প্রচারণায় মাঠে নেমেছে হাব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চারটি প্যানেল। প্রত্যেকেই ঢাকায় নির্বাচনী অফিস নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রবাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি কাকরাইলস্থ ইনষ্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) ভবনে সকাল ৯-৪টা হাব দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের হাব নির্বাচনে ৭০১ জন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৯৬ জন, চট্টগ্রামে ৭৫ জন এবং সিলেটে ৩০ জন ভোটার রয়েছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী এবং প্রত্যাহারকৃত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি হাবের অফিস বেয়ারার নির্বাচন ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। হাব নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চারটি প্যানেল হাব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনটি প্যানেলের প্রার্থীদের একই শ্লোগান হাবের সাবেক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সমর্থিত প্যানেল ঠেকাও। হাব বাঁচাও। হাব ঐক্য পরিষদের প্যানেল প্রধান হাবের সাবেক শীর্ষ নেতা ফরিদ আহমেদ মজুমদারের আস্থাভাজন এজেন্সী মালিকরা জানান, আমরা ফরিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তারা বলেন, আমাদের একটাই টার্গেট তসলিম সমর্থিত প্যানেল ঠেকাও।
এদিকে সোমবার বিজয়নগরস্থ একটি হোটেলে হাব ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে হাব নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা আহবান করা হয়েছে। হাব নির্বাচনের যেসব প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে তা হচ্ছে, হাব ঐক্য ফোরাম (প্যানেল প্রধান ফারুক আহমেদ সরদার), হাব ঐক্য পরিষদ (প্যানেল প্রধান ফরিদ আহমেদ মজুমদার), হাব বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক জোট (প্যানেল প্রধান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট) ও হাব কল্যাণ ফোরাম (প্যানেল প্রধান সৈয়দ গোলাম সরওয়ার)।
হাব বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক জোটের প্যানেল প্রধান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, হাবের অস্তিত্বের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। হাব নির্বাচনে চারটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছে। হাব ঐক্য ফোরামের প্যানেল প্রধান ফারুক আহমেদ সরদার হাব পল্লীর দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এবং বিগত আটাব নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে বের করে দিয়েছেন। অথচ তিনি হাব ঐক্য পরিষদের প্যানেল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামছেন।
হাব কল্যাণ ফোরামের লোকজনও এদিক ওদিক চলে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্যানেল প্রধান সম্রাট বলেন, আমি ঢাকা চেম্বারের ডিরেক্টর, লায়ন নামে একটি সংস্থার গভর্নর এবং হাবে মহাসচিব ছিলাম। আমি প্যানেল প্রধান হিসেবেই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে থাকবো কোনো প্যানেলের সাথে সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নয়া পল্টনস্থ একটি হোটেলে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
হাব কল্যাণ ফোরাম প্যানেলের প্রার্থী ও আটাব নেতা গোলাম মাহমুদ মানিক ভূঁইয়া বলেন, হাব নির্বাচনে চারটি প্যানেলের মধ্যে তিনটি প্যানেলই হাবের সাবেক সভাপতি তসলিম ঠেকাও শ্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, হাবে দুর্নীতি, লুটপাট এবং অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কবর রচনার লক্ষ্যে আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছি। ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে হাবের এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ভোটাররা এবার বুঝে শুনেই তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হাব ঐক্য পরিষদের প্যানেল প্রধান ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, হাবে প্যানেল প্রধান হিসেবে নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে বিধায়ই হাব ঐক্য পরিষদ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, এম এ রশিদ শাহ সম্রাট হাবে মহাসচিব থাকাকালে তার মক্কা ট্যুরসের মাধ্যমে সউদীতে ২৫০ জন খরগোশ (মানবপাচার) করতে গিয়ে আশকোনাস্থ হজ অফিসের তৎকালীন পরিচালক বজলুল হক বিশ্বাসের কাছে (পাসপোর্ট) ধরা পড়েছিল। লাব্বায়েকের আলহাজ জামাল উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে সাক্ষী। তিনি বলেন, হাব নির্বাচনে আমার প্যানেল বিজয়ী হলে পূর্বের সর্বোচ্চ ৩০০ হজ কোটা বহাল এবং আয়টা রুলস অনুযায়ী হজ এজেন্সিদের ৭% কমিশন বহালের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো ইনশাআল্লাহ। হাব পল্লীর দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং আটাব নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে বের করে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাব ঐক্য ফোরামের প্যানেল প্রধান ফারুক আহমেদ সরদার বলেন, আমাদের প্যানেল থেকে ফরিদ আহমেদ মজুমদারকে বের করে দেয়া হয়নি। মতের অমিল থাকায় তিনি পৃথক প্যানেলে নির্বাচন করছেন। হাব নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি হাব সদস্য ও হজযাত্রীদের কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :