শিরোনাম
◈ সিলেটকে হারিয়ে বিপিএলের প্লে-অফে খেলার পথে দুর্বার রাজশাহী ◈ গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক খাতে খরচ বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা ◈ পাকিস্তানের মাটিতে ৩৪ বছর পর টেস্ট জয় করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ◈ কারাগারে সাবেক বিচারপতি মানিকের মৃত্যুর খবর নিয়ে যা জানা গেল ◈ রংপুরের হয়ে খেলতে আসছেন টিম ডেভিড, সুনিল নারাইন ও ডেভিড ওয়ার্নার  ◈ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে কেএনএফের দুই সন্ত্রাসী আটক ◈ এবার আল্টিমেটাম দিয়ে নিউমার্কেট থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ◈ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা বন্ধ করা উচিত: নিক্কেই এশিয়ায় মতামত প্রতিবেদন ◈ সংস্কার  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল পরিবর্তন করতে হবে,তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান ◈ টেবিলের নিচ দিয়ে টাকা দেওয়া থেকে বাড়তি ভ্যাট ভালো: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:৩২ রাত
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

এয়ার টিকিটের মজুতদারি বন্ধের দাবি আটাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক : এয়ার টিকিটের দাম কমানোর পাশাপাশি যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুতদারি বন্ধের দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি। আর এর নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকিট বুকিং।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যগামী কিছু এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু সংখ্যক এজেন্সির নামে কোন প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধু ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট ২ থেকে ৩ মাস অগ্রিম তারিখের প্যাসেঞ্জার নেম রেকর্ড (পিএনআর) তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে।

তিনি বলেন, এভাবে টিকিট মজুতদারি করার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকিট মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ে এবং বিদেশগামী শ্রমিক, স্টুডেন্ট, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।

তিনি বলেন, মূলত মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই আসন বিক্রি নিশ্চিত করা এবং অধিক মুনাফার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন রুটের সিট ব্লক করে রাখে। যেমন- ওমরাহ, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ধরনের নাম ছাড়া ওপেন গ্রুপ সিট বিক্রয় করে। এসব সেক্টরের টিকিট ব্লক করলে এর সরাসরি প্রভাবে অন্যান্য রুটের (যেমন লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ইউরোপ, আমেরিকা) এয়ার টিকিটের মূল্যও বাড়ে। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো এ ধরনের নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে তাদের পছন্দের গুটিকয়েক এজেন্সির মাধ্যমে বাজারে টিকিট বিক্রি করে। এতে মনোপলি মার্কেট তৈরি হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইটের সংখ্যা কমানোর কারণেও টিকিটের দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি। 

আটাব সভাপতি বলেন, অনেক এয়ারলাইন্স তাদের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইট স্লটও ব্যবহার করছে না। তারা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে চাহিদা যোগানের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর দেশের ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড যাত্রী পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশ থেকে বহির্গমন ও আগমনের হার কমে যায়। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের সর্বস্তরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসায় পর্যটকদের বহির্গমন ও আগমনের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাথে সাথে যাত্রীদের ফ্লাইটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সংখ্যা কম হওয়ায় আসন সংকট দেখা দিচ্ছে এবং টিকিটের মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, জাজিরা এয়ার, ওমান এয়ার, সৌদি এয়ারলাইন্স আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে সপ্তাহে ৯৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এখন পরিচালনা করছে ৪৬টি। ফ্লাইট কমিয়েছে ৫২টি। এছাড়া ফ্লাইনাস সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। আগে এসব এয়ারলাইন্স ২২০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার বড় এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু এখন অধিকাংশ ফ্লাইটে ১৬৮ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ছোট এয়ারক্রাফট ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ আসন কমে গেছে।

আটাব সভাপতি বলেন, বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন শ্রমিক ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে বিভিন্ন দেশে নিয়োগ পেয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ২০২৪ সালে সৌদি আরবে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৩ জন শ্রমিক নিয়োগ পায়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজাদ ৪৩০ জন শ্রমিক নিয়োগ পেয়েছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে দ্বিগুণ হারে শ্রমিক নিয়োগ পেয়েছে।

এয়ারলাইন্সগুলোর চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতা, দেশীয় এয়ারলাইন্সের সক্ষমতার অভাব, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা সময়মত না পাওয়াও ভাড়া বাড়ার কারণ বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আটাবের পক্ষে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো শিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধি করা, অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দ্রুত অনুমোদন দেওয়া ও ওপেন স্কাই ঘোষণা করা যেন সকল দেশের এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে আগ্রহী হয়। নাম, পাসপোর্ট, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স ব্যতীত কোনো বুকিং না দেওয়া। 
ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো চাহিদা না থাকার পরও পণ্য মজুত করার মত এয়ার টিকিট মজুত করছে এটা বন্ধ করা।

বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি সিট এয়ারলাইন্সসমূহ ব্লক করে রেখেছে। এই সিটগুলি জরুরিভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান করা। এয়ারলাইন্সের ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি উন্মুক্ত রাখা। জিডিএস/এনডিসি-এ সিট সেল করার নির্দেশনা দেওয়া এবং সকল এজেন্সিকে বিক্রি করার সুযোগ দেওয়া। বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা। এয়ারলাইন্স থেকে গোপনীয় ভাড়ায় গ্রুপ টিকিট বা ব্যক্তিগত মূল্যে টিকিট বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া। লেবার ফেয়ার নির্ধারণ করা। 

কোনো কোনো এজেন্সির কাছে ১০ থেকে ২০ হাজার সিট বা টিকিট দিয়ে দেওয়া হয়। এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ সেল সিলিং নির্ধারণ করতে হবে। শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের এয়ারলাইন্স ফরমেটে টিকিট দিতে হবে, যেখানে ভাড়া, এজেন্সি বিবরণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃত মূল্য যাত্রীর দৃষ্টিতে আসবে ফলে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম নিতে পারবে না। মূল্য উল্লেখ ছাড়া টিকিট না দেওয়া। গ্লোবাল সেলস এজেন্ট-জিএসএ কর্তৃক ভাড়া বৃদ্ধি ও কাউন্টার সেল বন্ধ করা।  ১৯৮৪ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও বিধিমালা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা। বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো অল্প টাকায় যাত্রী পরিবহন করার ঘোষণা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তারা লিগ্যাসি ক্যারিয়ারের মতই বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে, যা বন্ধ করা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আটাব বা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আটাবের মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, উপমহাসচিব তোয়াহা চৌধুরী, অর্থসচিব মো. সফিক উল্যাহ্ নান্টু প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়