শিরোনাম
◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা ◈ মণিপুরের সহিংসতায় মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০২২, ০৬:৩০ সকাল
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২২, ০৮:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদ যাত্রা

সক্ষমতার অভাবেই রেলে বিপর্যয়

ট্রেনযাত্রার শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি

কালের কণ্ঠ: এবারের ঈদ যাত্রার শুরুর দিকে রেলে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও পরে তা বিপর্যয়ে রূপ নেয়। যাত্রার প্রথম দিন থেকে শুধু উত্তরাঞ্চলের কিছু ট্রেন দেরিতে ঢাকা ছাড়লেও শেষ দিন পুরো সময়সূচিই ভেঙে পড়ে। যাত্রীর চাপ সামলাতে বেহাল ট্রেনের। ট্রেনের ভেতরে বা ছাদে যেন তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। যারা টিকিট কেটেছে, তাদের কেউ কেউ আসন পাওয়া তো দূরের কথা, ট্রেনে উঠতেও পারেনি—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, সক্ষমতার তুলনায় যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দিন দিন ট্রেনে যাত্রীর চাপ বাড়লেও সেই তুলনায় সক্ষমতা তেমন বাড়েনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা না বাড়াতে পারলে ঈদ কিংবা ছুটিতে এমন বিপর্যয় নিয়মিতই ঘটবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এবারের ঈদে রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩৮ জোড়া আন্ত নগর ট্রেন চলাচল করেছে। সেই সঙ্গে ছিল ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন, লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনও। আন্ত নগর ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ছিল। আর সব মিলিয়ে রেলওয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করে। সেই হিসাবে রেলে পাঁচ দিনে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহনের কথা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এবারের ঈদে ট্রেনে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। অথচ রেলের সক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ আড়াই লাখ। বাকি আড়াই লাখ যাত্রীর জায়গা দিতেই রেল নাজেহাল।

এদিকে এবার রেলে বিপর্যয়ের আরেকটি কারণ ছিল গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস আটকে পড়া। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ট্রেনটির কয়েকটি বগির চাকার স্প্রিং ভেঙে যায়। ট্রেনটি এখানে আটকে পড়ায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মূলত এই রেলপথ ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের (ঢাকার) রেলপথের যোগাযোগ হয়। আবার এই রেলপথ ব্যবহার করে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে ট্রেন যায়। এই পথ বন্ধ থাকায় ঈদের আগের দিন রেলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।

ঈদ যাত্রায় রেলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এই ঈদে আমাদের সীমিত সামর্থ্যের সর্বোচ্চটাই আমরা ব্যবহার করেছি। কিন্তু সক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়ায় আমাদের ট্রেনের পাঁচ/ছয়টি বগির স্প্রিং বসে গেছে। অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। যেসব স্টেশনে যাত্রাবিরতি দুই মিনিট, সেখানে যাত্রী ওঠানামা করতেই ১০ মিনিট পেরিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। ’ সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো ডাবল লাইনে উন্নীতকরণের কাজ করছি। একই সঙ্গে উন্নয়নকাজ শেষে নতুন নতুন কোচ ও ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত করা হচ্ছে। যমুনার ওপর দ্বিতীয় রেল সেতু চালু হলে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা অনেক বাড়বে। ’

বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৯-৭০ সালে রেলওয়েতে ব্রড গেজ ও মিটার গেজ মিলিয়ে মোট লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ছিল ৪৮৬টি। ২০০৮-০৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৮৬টিতে। এরপর ২০২০ সালে এসে আরো কমে ইঞ্জিনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৬০টিতে। যদিও আন্ত নগর, মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন মিলে গত ১২ বছরে সংখ্যার দিক থেকে ট্রেনের চলাচল বেড়েছে। রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ সালে মোট ২০ হাজার ৫৫৫টি ব্রড গেজ ট্রেন চলাচল করলেও ২০১৯-২০ সালে চলেছে ২৭ হাজার ১৫৫টি ট্রেন। ২০০৮-২০০৯ সালে ৬৯ হাজার ৬৮১টি মিটার গেজ ট্রেন চললেও ২০১৯-২০২০ সালে ৯২ হাজার ৫৫৬টি ট্রেন চলাচল করেছে।   

এসব ট্রেনে কী পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে, সেটার হিসাব রাখা হয় টিকিট বিক্রির হিসাব ধরে। ফলে যারা বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে, রেলওয়ে তাদের হিসাব রাখতে পারে না। সাদা চোখে ঈদে এক ট্রেনের ছাদে শত শত যাত্রী থাকলেও বছর শেষে তা কাগজে-কলমে শূন্য দেখানো হয়।

দেশের পুরো রেলব্যবস্থাকে মোটাদাগে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল—দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। রেলের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০ বছর ধরে প্রায় নিয়মিত পূর্বাঞ্চলে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে পশ্চিমাঞ্চলে এ চিত্র কিছুটা ভিন্ন, এখানে যাত্রী কমেছে।

২০০৯ সালে রেলের নিয়মিত যাত্রী ছিল ৬৫ হাজার ৩৩১ জন। বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৯২ হাজার ৭০৫ জনে। তবে ২০২০ সালে যাত্রীর সংখ্যা কিছুা কমে ৬৩ হাজার ৯৮৭ জনে নেমে আসে। যদিও ওই বছর করোনা মহামারির কারণে বেশির ভাগ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

যাত্রীর চাপের অনুপাতে রেলের সক্ষমতা না বাড়া প্রসঙ্গে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালক) সরদার শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘সক্ষমতা বাড়ছে না, তা কিন্তু নয়। তবে যাত্রী যে হারে বাড়ছে, সেই হারে সক্ষমতা বাড়ছে না। ঢাকা-টঙ্গী নতুন লাইন না হওয়া পর্যন্ত সমস্যার তেমন সমাধান হবে না। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কোচসংকট রয়েছে। যেমন—উত্তরাঞ্চলে সাতটি ট্রেন চলে, এতে পাঁচটি করে কোচ যুক্ত করা গেলে ৩৫টি কোচ বেড়ে যেত। এতে প্রায় চার হাজার ২০০ যাত্রী প্রতিবার বেশি বহন করা সম্ভব হতো। ’

জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান গতকাল বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা না বাড়ালে ঈদে বা দীর্ঘ কোনো ছুটিতে ট্রেনে এমন বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে। আর সক্ষমতা বাড়াতে হলে রেলের লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং সিঙ্গল (একক) লাইনগুলোকে ডুয়াল (দুই) করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়