শাহীন খন্দকার: [২] কোটা আন্দোলনে গত ৮ দিনে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে। এখনো ট্রেন চলাচলের কোন নির্দেশনা আসেনি। রবিবার (২৮ জুলাই) সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ্ সুফী নূর মোহাম্মদ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও কারফিউর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ট্রেন।
[৩] এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী সদর দপ্তর এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে একশত সাতটি যাত্রীবাহী ট্রেন ৮টি মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আর্থিকক্ষতি গুনতে হচ্ছে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ঈশ্বরদীসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীরা।
[৪] নিরাপদ যাতায়াতসহ স্বল্প খরচে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্য পরিবহনে যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ ট্রেন । তাই ট্রেন চলাচল না করায় সড়ক পথে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েকগুন টাকা গুনতে হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য ছুটতে হচ্ছে এবং ছোট ছোট যানবাহনে এই অঞ্চলের মানুষদের।
[৫] আমাদের পাবনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে সর্বাধিক এলাকা জুড়ে পাকশী রেলওয়ে বিভাগ গঠিত। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী সদর দপ্তরের আওতাধীন।
[৬] গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগে প্রতিদিন ১০৭টি আন্তঃদেশীয়, কলকাতার এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে দেশে চলাচল করে ৫৬টি আন্তঃনগর ট্রেন ৩১টি মেইল, ১২টি লোকালসহ মোট ৯৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।
[৭] এছাড়াও মালবাহী ১২টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগ গড়ে দেড় কোটি টাকা আয় করে থাকে। মালবহি ও তেলবাহী ট্রেন থেকে আয় হয় রেলওয়ের। নাশকতার আশঙ্কায় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
[৮] শনিবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১০৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে প্রতিদিন শুধুমাত্র পাকশী রেল বিভাগ যাত্রী খাতে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মাল ও তেলবাহী ট্রেনও কয়েকদিন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পাকশী রেল বিভাগ। এরই মধ্যে একদমই সীমিত পরিসরে মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) থেকে কড়া নিরাপত্তায় মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
[৯] পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রাখা রয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি।
[১০] তিনি আরও বলেন কোটা আন্দেলনে এবং কারফিউর জন্যে পাকশি প্রকৌশল বিভাগের-ই শুধু ক্ষতি হয়েছে পাঁচকোটি টাকা। আরও বলেন, পাকশি রেলওয়ে বিভাগের যাত্রীবাহি সব ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে।
[১১] এদিকে যাত্রী খাতে রেলের আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সব পরিবহনের তুলনায় রেলওয়েতে সেবার মান বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যাও ক্রমশই বাড়ছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে পাকশী রেলওয়ে বিভাগ শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
[১২] এতে প্রতিদিন গড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল না করার কারণে আয় কমেছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন আশা করছি,দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুই-একদিনের মধ্যে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সব যাত্রীবাহীসহ মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এসকে/কে/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :