এম. মোশাররফ হোসাইন: রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের যৌথ পরিদর্শন শেষে একথা জানান ফায়ার সার্ভিসের জোন-১ এর উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বজলুর রশিদ।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর অন্যতম কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়া। সিঁড়িতে দোকান, করিডোর উন্মুক্ত নয়, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না-থাকাসহ বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। মার্কেটটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনা হলে ভবন থেকে বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। আমরা এখানে এসেছি নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। বঙ্গবাজারে আগুনের সঙ্গে এই পরিদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, গাউছিয়া মার্কেটে শুধু ফায়ার সার্ভিস নয়, এনএসআই ও ডিজিএফআই প্রতিনিধিসহ আমরা পরিদর্শন করেছি। একটি সার্ভে করে ফরম ফিলাপ করেছি। আগুন নির্বাপণের জন্য বা দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য যেসব সাজ সরঞ্জাম প্রয়োজন, এই মার্কেটে সেসব ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল বা পর্যাপ্ত নয়।
একইসঙ্গে পরিদর্শনে বিদ্যমান ঘাটতিগুলো সমাধানে সুপারিশ দ্রুতই মার্কেট নেতাদের কাছে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের অনেক মার্কেট ও কাঁচাবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ঠাঁটারিবাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, চকবাজারসহ বিভিন্ন জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সব মার্কেটেই কিছু না কিছু ঝুঁকি রয়েছে। কারণ কেউ ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই আমাদের দৃষ্টিতে বেশিরভাগ মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা অনুরোধ করবো মার্কেটগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা যেন শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়।
এদিকে গাউছিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, যেসব ত্রুটি আছে, শিগগিরই সেগুলো সমাধান করা হবে।
এসময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইন্সপেক্টর মো. আল মাসুদ, গাউছিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার বিশ্বাসসহ দোকান মালিক সমিতির বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার (৫ এপ্রিল), রাজধানী সুপার মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটসহ রাজধানীতে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে বলে জানান মো. মাইন উদ্দিন। এসব মার্কের্টে সার্ভে চালানোর কথাও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সব মার্কেটে বিএমডিসি কোড অনুযায়ী প্রবেশ কিংবা বাহির হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণে যে ব্যবস্থা থাকার কথা, তা নেই। তাই আমার কাছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। মার্কেটের মালিকপক্ষকে নিয়ে এ সার্ভে বা জরিপ করা হবে এবং পরবর্তী করণীয় জানিয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি গুলিস্তান ও সায়েন্সল্যাবে ভবন বিস্ফোরণ, বেশকিছু ভবন ও প্রতিষ্ঠানে আগুনে প্রাণ গেছে বহু মানুষের।
গত মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশে কাপড়ের অন্যতম প্রধান মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই আগুন কেড়ে নেয় সব। তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের মার্কেটগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুনে আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ওই আগুনের ঘটনার পরই ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো পরিদর্শনে নেমেছে ফায়ার সার্ভিস।
এমএইচ/এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :