শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২৩, ০৩:৩২ রাত
আপডেট : ০৬ এপ্রিল, ২০২৩, ০৪:০৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবার পরিকল্পনার চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু

মো. মনোয়ারুল হক

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে সংস্থাটির একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার (মেডিকেল অফিসার) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। মো. মনোয়ারুল হক নামের ওই কর্মকর্তা বছর দুয়েক ধরে বেতন–ভাতা পাচ্ছিলেন না। এর আগে তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। প্রথম আলো

পরিবারের অভিযোগ, মনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে এটাকে আত্মহত্যা মনে হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তেজগাঁও থানা–পুলিশ কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভবনের ১২তলার ১২০১ নম্বর কক্ষের তালা খুলে মনোয়ারুলের লাশ উদ্ধার করে। গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ওই কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। কক্ষটি ছিল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অডিট) আবুল কালাম আজাদের।

আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশের কক্ষে আবুল কালাম আজাদকে পাওয়া যায়।

তিনি দাবি করেন, গতকাল বেলা একটার দিকে মনোয়ারুল হক তাঁর কক্ষে এসে বলেন, একটু কথা আছে। জোহরের নামাজের সময় হওয়ায় তিনি দরজা খোলা রেখে এক নারী পিয়নকে রেখে নামাজ পড়তে যান। বেলা ১টা ৫০ মিনিটে ফিরে এসে দেখে কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। পরে পিয়ন এসে চাবি দিয়ে দরজা খোলার পর চিৎকার করে ওঠেন। এ সময় সবাই ছুটে এসে ফ্যানের সঙ্গে মনোয়ারুলকে ঝুলতে দেখেন। তখন কক্ষটি বন্ধ করে দিয়ে ঘটনাটি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিমকে জানান। তিনি তেজগাঁও থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে মনোয়ারুলের লাশ উদ্ধার করে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রায় দুই কোটি টাকার অডিট আপত্তির ঘটনায় মনোয়ারুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। সেই মামলার রায়ে তাঁর এক বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি দাবি করেন, মনোয়ারুলের বিরুদ্ধে নতুন তদন্তে আরও ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তিনি প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেই মনোয়ারুল অধিদপ্তরে এসেছিলেন। এসব নিয়ে হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিম বলেন, মনোয়ারুলের বিরুদ্ধে দুবার বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। দুই মামলার রায়ে তাঁর লঘুদণ্ড হয়। সর্বশেষ মামলার রায়ে তাঁর এক বছরের বার্ষিক বেতন স্থগিত এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকার অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি হয়নি। এ ছাড়া তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। মনোয়ারুল হকের কাছে সরকারের দেনা–পাওনার কারণে তিনি পেনশন পাচ্ছিলেন না। পেনশন জটিলতা নিরসনে তিনি এসে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছিলেন।

মনোয়ারুল অডিট আপত্তিবিষয়ক জটিলতা নিরসনে গত বছরের জুনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। গতকালও তিনি অধিদপ্তরে ওই আবেদনটি আবার জমা দেন। তাতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জন্য করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন মনোয়ারুল। গত বছর ২০ মার্চ থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘কিন্তু পরবর্তী অডিট আপত্তির কারণে আমার পিআরএল, লামগ্রান্ট, অবসর অনুমোদন ইত্যাদি কার্যক্রম এই অধিদপ্তরের পেনশন শাখায় স্থগিত অবস্থায় পড়ে আছে। আমি প্রায় ১২ মাসের অধিককাল বেতন–ভাতা না পেয়ে পরিবার নিয়ে নিদারুণ দুঃখ–কষ্টে দিনাতিপাত করছি।’

মনোয়ারুল সপরিবার পুরান ঢাকার নারিন্দায় থাকতেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদরে। মনোয়ারুলের ভাই মনিরুল হক সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। তিনি র‍্যাব-৮–এর অধিনায়কেরও দায়িত্বে ছিলেন। 

মনিরুল হক অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইয়ের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মনোয়ারুলের ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। গত সোমবার মনোয়ারুল পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখেন তাঁর ব্যাপারে সেই একই অডিট আপত্তি দেওয়া হয়েছে। তখন বিষয়টি সচিবকে জানালে কেন এখনো মনোয়ারুলের পেনশনের কার্যক্রম শুরু করা হলো না, সে বিষয়ে কারণ দর্শাতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে নোটিশ দেন। জবাব দিতে তিন কর্মদিবস সময় বেঁধে দেন তিনি। বিষয়টি ভাই তাঁকে জানিয়েছিলেন। সে কারণে তাঁর ভাইকে গোপনস্থানে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মনিরুল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাবে। মনিরুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এমএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়