সুজিৎ নন্দী: ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দেশের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত বারিধারার ৫৫০টি বাড়ির মধ্যে ৩৪২ বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দেওয়া হয়েছে। সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া আট স্তরের ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে বারিধারা এলাকার মাত্র ৫টি বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দেওয়া হয়নি।
এছাড়াও ২০৩টি বাড়ি আটটি শর্তের মধ্যে কিছু সংখ্যক শর্ত পূরণ করেছে। অন্যদিকে একদমই শর্ত পূরণ করেনি ৩৪২টি বাড়ি, যাদের বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে।
তিনি আরো বলেন, একটি অভিজাত এলাকায় যদি এমন চিত্র আমাদের দেখতে হয় তাহলে আমাদের আর কি করার আছে ? বার বার বলা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের সুয়ারেজ লাইনে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ দেওয়া যাবে না। ওয়াসার পৃথক লাইনে এসব বাড়ির বর্জ্য যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি নেই।
আতিকুল ইসলাম বলেন, যেখানে ওয়াসার লাইন নেই সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থায় ইটিপি প্লান্ট বসিয়ে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দ্বিতীয় দিনের মত অভিযান পরিচালনা করেছি। পরবর্তীতে বনানী ও নিকেতন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার বারিধারা এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে, খালে বা লেকে দেওয়া বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করে মেয়র একথা বলেন।
অভিযানের অংশ হিসেবে বারিধারা ১১ নম্বর রোডের চারটি বাড়ির সামনে ড্রেনে কলাগাছ দিয়ে সারফেস ড্রেন থেকে পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়ির মালিকরা অনতিবিলম্বে নিজ থেকে এসব সংযোগ বন্ধ না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ করারও হুশিয়ারি দেন মেয়র।
আতিকুল ইসলাম বলেন, লেকে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। মশা নিধনে ন্যাচারাল সলিউশন সম্ভব হচ্ছে না মাছ চাষ করতে না পারার কারণে। আমরা ড্রেন ও খাল আর দূষিত হতে দিব না।
আতিকুল ইসলাম বলেন, কোনোভাবেই পয়ঃবর্জ্য বা ব্ল্যাক ওয়াটার সিটি করপোরেশনের ড্রেনে, খালে, লেকে ঢুকতে পারবে না। অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে তাদের জানিয়ে আসছি, সচেতন করে আসছি। গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি, কিন্তু তারা কথা শুনেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা অভিযান শুরু করলাম। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে, এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাসার সামনে গিয়ে ড্রেনগুলো আমরা কলাগাছ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছি।
জানা যায়, ৪ জানুয়ারী গুলশান ২ এর ১০৪ ও ১১২ নম্বর রোড এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ বন্ধে ডিএনসিসি প্রথমবার অভিযান পরিচালনা করে।
গুলশান, বনানী, বাড়িধারা ও নিকেতন এলাকায় প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার প্রতিনিধি, একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জরিপ কাজটির তত্ত্বাবধান করেন। চারটি এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এই বাড়িগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়ঃবর্জ্য সরাসরি সারফেস ড্রেন ও লেকে পরেছে। মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সঠিকভাবে দেয়া আছে এবং ৫২৪টি বাড়িতে আংশিকভাবে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। ফলে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী এবং বারিধারা সোসাইটির প্রতিনিধিবৃন্দ।
এসএন/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :