শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১১:২৮ রাত
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১১:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পাহাড়ে  গিয়ে চিকিৎসা দিতেন শাকির

মাসুদ আলম: উগ্রবাদী নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সক্রিয় ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

বুধবার রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-মো. আব্দুল্লাহ (২২), তাজুল ইসলাম (৩৩), মো. জিয়াউদ্দিন (৩৭), মো. হাবিবুবুল্লাহ (১৯) ও  মাহামুদুল হাসান (১৮)। তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন ও ফতোয়া সংক্রান্ত ১২ পাতা কাগজ উদ্ধার করা হয়। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির পরিকল্পনা হয় কারাগারে। 

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান  বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা নব্য উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া’র সক্রিয় সদস্য। এছাড়া গ্রেফতার হাবিবুবুল্লাহ ও মাহামুদুল হাসান ওই সংগঠনের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জিহাদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। জঙ্গি সংগঠনের সদস্য আবদুল্লাহ, তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন সংগঠনের সদস্য হিসেবে কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে আসা নতুন সদস্যদের সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করতো। এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে হিজরত করা তরুণদের রিসিভ করে ওই আসামিরা আব্দুল্লাহর বাসায় নিয়ে যেতো এবং তাদের উগ্রবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতো। পরবর্তীতে তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো তারা। 

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আবরারুল হককে রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। আবরারুল হকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকির বিন ওয়ালী জানান, তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া’র দাওয়া বিভাগের প্রধান। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগে কাজ করতেন এবং পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের সময় কোনও জঙ্গি সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করতেন। 

আসাদুজ্জামান বলেন, কোনও সদস্য হামলার শিকার হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে করতে হবে সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতেন। সমতলে থাকাকালেও তিনি যেসব জঙ্গি সদস্য প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় অসুস্থ হতেন তাদের গোপন চ্যাটে আলাপ করে চিকিৎসা করতেন।

ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী পাহাড়ি জঙ্গি ক্যাম্পে এক মাসের বেশি সময় অবস্থান করেছেন। প্রতিমাসে একবার তিনি পাহাড়ি ক্যাম্প পরিদর্শন করতেন। এর পাশাপাশি জঙ্গি নেতা শামীম মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

তিনি বলেন, ক্যাম্পে তিন ভাগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো । প্রথম ভাগে পাহাড়ের ক্যাম্পে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। দ্বিতীয়ভাগে যুদ্ধ কৌশল যেখানে ডামি অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তৃতীয় ধাপে পেট্রলিং শেখানো হতো। ট্রেনিং ক্যাম্পটিতে শামীম মাহফুজের পাশাপাশি তমাল, রনবীর, রাকিব, ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী যাতায়াত করতেন এবং সার্বিক বিষয় তদারকি করতেন। ক্যাম্প থেকে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তারা বিদ্রোহীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে বন্দি করে রাখতেন।

তিনি আরও বরেন, জঙ্গিবাদের জন্য সদস্য রিক্রুটমেন্ট, অর্থ সংগ্রহ, সশস্ত্র সামরিক ট্রেনিং, আধুনিক অস্ত্র কেনাসহ বিশাল জঙ্গি বাহিনী গঠন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এসব উদ্দেশ্য পূরণ করতে তারা দেশব্যাপী ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ জন যুবককে এই সংগঠনের সদস্য করেন। সংগঠনের উদ্দেশ্যে ছিল পাহাড়ে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক ট্রেনিং, সংগঠনের উগ্রবাদী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়