শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট, ২০২২, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ০৫ আগস্ট, ২০২২, ০৮:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজধানীতে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

ডেস্ক রিপোর্ট: ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চলতি মাসে সর্বোচ্চ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়তে পারে। করোনাভাইরাসের সিমটমের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় করোনা টেস্টের পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় জুলাই মাসে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির পরিমাণ ছিল প্রায় দ্বিগুণ। তাই ভয়ংকর রূপ নেওয়ার আগেই সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিন দিন জ্বর থাকলেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। যায়যায়দিন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে দ্রম্নত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। নেগেটিভ হলে ভালো, পজিটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। চিকিৎসা নিতে দেরি করলে শরীরের অনেক অর্গান কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে সময় চিকিৎসকের আর কিছু করার থাকে না।

এদিকে, রাজধানীর প্রধান পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি

রয়েছে ১০০ এর ওপরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪ জন, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১৫, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি রয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে আছেন ১২৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১২১ জন। রাজধানীতে এই মুহূর্তে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি আছেন ২৪৬ জন।

ঢাকার বাইরে সব বিভাগ মিলিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৬ জন। ঢাকা বিভাগে (ঢাকা মহানগর বাদে) ভর্তি আছেন ৭ জন, ময়মনসিংহে ২, চট্টগ্রামে ৬২, খুলনায় ১, রাজশাহীতে ১, বরিশালে ৩, সিলেটে ও রংপুরে আক্রান্ত রোগী নেই। সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩২২ জন।

জুলাই মাসে সারাদেশে আক্রান্তের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৭১ জন। জুন মাসে ছিল ৭৩৭ জন। এই হিসেবে জুলাই মাসে জুনের প্রায় দ্বিগুণ আক্রান্ত হয়েছেন। মে মাসে আক্রান্ত ছিলেন ১৬৩ জন, এপ্রিলে ২৩, মার্চে ২০, ফেব্রম্নয়ারিতে ২০ ও জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন। চলতি বছর দেশে প্রথম ডেঙ্গুতে মারা যান জুন মাসে। জুলাই মাসে মারা গেছেন ৯ জন ও আগস্টের প্রথম তিন দিনে মারা গেছেন দুইজন। সব মিলিয়ে ১২ জন।

মুগদা মেডিকেলে এই মুহূর্তে ভর্তি ২৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৫ জন শিশু। এক শিশুর মা বলেন, বাসায় আক্রান্ত হয়েছে নাকি বাইরে কোথাও তা জানি না। দুই দিন জ্বর থাকার পর টেস্ট করা হলে তার বাচ্চার ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই মা বলেন, শিশুদের অনেক কষ্ট হয়। হালকা কাশি আছে। প্রথমে মনে করেছিলাম করোনা হয়েছে। পরে দেখি ডেঙ্গু। এখন কিছুটা সুস্থ হওয়ার পথে। পস্নাটিলেটও ভালো আছে।

এই হাসপাতালে ভর্তি আরও ২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। হাসপাতালে যারা এসেছেন তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন না হলেও ভালো নয়। হামিদা আক্তার নামে এক রোগীর মা বলেন, মুগদা এলাকাতেই তার বাসা। সেখানে প্রচুর মশা। মুগদা, মান্ডা ও খিলগাঁও এলাকায় ডেঙ্গু রোগীও বেশি। মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ডাক্তার দেখাতে এসে মাথা ঘুরে পরে যায়। এরপর ডাক্তার দ্রম্নত হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু সেল করা হয়েছে। সেলের অধীনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সেলে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১২ জন। আর তিনজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন। জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত ৭৪ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ২১ জন। আর জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে আগস্টের ৩ তারিখ পর্যন্ত ৫৩ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে এই হাসপাতালে।

সূত্র বলছে, শিশু হাসপাতালে 'নো অফিসিয়াল ডিলে' ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যদি কোনো শিশু ডেঙ্গু রোগী আসে তাহলে তাকে দ্রম্নত চিকিৎসা দিতে হবে। তার কাগজে ডেঙ্গু রোগীর একটা সিল থাকবে। এটা থাকা মানে দ্রম্নত চিকিৎসা হতে হবে। প্রশাসনিক কাগজপত্র ভর্তি করার পর তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে বলা আছে, তাদের টেস্ট রিপোর্টগুলো আধাঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে হবে। ২৪ ঘণ্টা ল্যাব খোলা রাখা হচ্ছে। কোনো রোগী যাতে টেস্ট করতে সমস্যায় না পরে। ডেঙ্গু টেস্ট ফ্রি করা হয় বলেও জানায় সূত্রটি।

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ডেঙ্গু রোগী জুলাই মাসে প্রথম ছয় মাসের দ্বিগুণের বেশি পাওয়া গেছে। এই হার চলতে থাকলে ক্যাজুয়ালিটি বাড়বে। রোগী যত বাড়বে ক্যাজুয়ালিটি তত বাড়ার শঙ্কা থাকবে। তাই আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। রাতে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে। সকাল ও সন্ধ্যায় যাতে কোনোভাবেই মশা কামরাতে না পারে। নিজেদের আঙ্গিনাটা নিজেরাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

এই চিকিৎসক বলেন, এতদিন রোগী বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু জুলাইয়ে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে। আগস্ট মাসে কি হয়, তা বলা যায় না। তবে এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যদি বেশি রোগী হয়, তাদের বেশির ভাগেরই যদি আইসিইউ লাগে তখন ক্যাজুয়ালিটি বাড়বে। যখন আইসিইউ না পাবে তখন মৃতু্য বাড়বে। দুই থেকে তিন শতাংশ রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বাকিরা তো বাসায় বসেই অনেকে সুস্থ হয়ে যায়। অনেকে টেস্টও করে না। তাই বলা যাবে না পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিন্তু রোগী বাড়লে ভয়াবহ হতে পারে।

ডেঙ্গুতে মৃতু্য ঠেকাতে অভিভাবকদের কি করা উচিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রথমে জ্বর হওয়ার দুই দিনের মাথায় ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। এই টেস্ট করতে যেহেতু খরচ খুবই কম তাই চিন্তার কারণ নেই। নেগেটিভ আসলে আলহামদুলিলস্নাহ। আর পজিটিভ আসলে চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। রোগী যদি আগে আসে তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়। আর দেরি হলে অনেক কিছুই করার থাকে না। ডেঙ্গু লিভার, কিডনি, ব্রেন, হার্টের টিসু্য নষ্ট করে ফেলে। এতে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অক্সিজেন সার্কুলেশন হয় না। যার কারণে এসব রোগীকে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যায়। তাই অভিভাবকদের আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুরুতেই টেস্ট, এতে সবাই সিকিউর।'

তিনি বলেন, করোনার সিমটমের সঙ্গে তেমন মিল নেই। তবে বর্তমানে শিশুদের হালকা কাশি থাকে। আগে বাচ্চাদের কাশি পাওয়া যেত না। ডেঙ্গু হলে শুধু জ্বর হতো। গলা ব্যথ্যা, কাশি এগুলো থাকতো না। তবে এখন কিছুটা কাশি থাকে। তবে এটা যে করোনার সঙ্গে পুরোপুরি মিল রয়েছে তা বলা যাবে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তিন চার দিন পর সিভিয়ার সিমটম দেখা দেয়। তবে এই সিভিয়ারিটির সঙ্গে করোনার কোনো মিল নেই।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান টুটুল বলেন, 'রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাচ্চাদের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র ৫ জন শিশু ভর্তি আছে। সব রোগী আশপাশের এলাকার। জুলাইয়ে অনেক রোগী পাওয়া গেছে। আগস্ট মাস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জ্বর নিয়ে অবহেলা করা যাবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়