মহসিন কবির: রাজধানীতে বাসা ভাড়া যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বেতন বাড়ছে না। এছাড়া বাড়িওয়ালারা প্রতি বছরই ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়ানোয় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে। মধ্যবিত্তরা আরো বেশি বিপদে পড়ে। তারা কারো কাছে বলতে পারছেন না। বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। অসহায় মানুষ।
ঢাকায় কত শতাংশ মানুষের নিজের ঘর রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোনো সংস্থার কাছেই। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব ঘর নেই। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। আর ৩০ শতাংশ মানুষ যাদের নিজ ঘর রয়েছে, তাদের খেয়াল-খুশির ওপর নির্ভর করে ভাড়াটিয়াদের জীবন-মান।
বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছেন অনেক বাড়ির মালিক। আইন অনুযায়ী, প্রতি দুই বছর পর বাড়িওয়ালারা চাইলে মানসম্মত পর্যায়ে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারবেন। তবে সেই আইন বাস্তবায়ন করবে কোন সংস্থা, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
ফলে আইনের প্রয়োগ হয় না। আর এই সুযোগে বাড়িওয়ালারা খেয়াল-খুশিমতো ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। ঢাকায় বসবাস করা ৭০ শতাংশ মানুষের যেখানে নিজ ঘর নেই, সেই শহরে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের অধিকার সংরক্ষণে এখনও কার্যকর কোনো আইন নেই। কাগজে-কলমে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করা হলেও সেটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বা মন্ত্রণালয় আজও ঠিক হয়নি। ফলে কাগুজে আইনে বন্দি ভাড়াটিয়াদের অধিকার।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) তথ্যমতে, রাজধানীতে ৩০ শতাংশ মানুষের নিজের ঘর আছে। এ হিসাবে শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, রাজধানীর জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ ধরলে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ নিজস্ব আবাসনের বাইরে রয়ে গেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বলে জানা গেছে, সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন বাড়ির মালিকরা। প্রতিবছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয় বলে জানা গেছে। তবে আইনে আছে প্রতি দুই বছর পর বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া বাড়াতে পারবেন, তবে তা হবে যুক্তিসঙ্গত। অর্থাৎ, বাড়িওয়ালা একবার ভাড়া বাড়ালে দুই বছরের আগে ভাড়া আর বাড়াতে পারবেন না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা ভাড়া থাকেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই বাড়া বৃদ্ধিটা জুলুম হয়ে যায়। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভাড়া বৃদ্ধি করলে সেটা যৌক্তিক বলেই মনে করি। অনেক বাড়ির মালিক রয়েছেন, যাদের একমাত্র আয় বাড়ি ভাড়া থেকে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপে তাদেরও ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক। সেটা হতে হবে অবশ্যই দুই পক্ষের চাহিদা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে।
বাড়ির মালিকরা বলছেন, তারা নিরুপায়। রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর বাড়ির মালিক আবু হোসেন বলেন, সারাজীবনের জমানো টাকা দিয়ে একটা বাড়ি বানিয়েছিলাম। চাকরি থেকে অবসরে আসার পর আয় বলতে এই বাড়ি ভাড়া। নিজের সংসার চালানো, সন্তানদের খরচও এখন ভাড়ার টাকা থেকে দিতে হয়। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদেরও বাজারে যেতে হয়। ভাড়াটিয়াদের যেমন কষ্ট হয়, আমাদেরও কষ্ট কম না। তবে আমি জুলুম করি না। বছরে ১ হাজার টাকা করে বৃদ্ধি করি।
ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অনেকে বাসা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম টাকার বাসা খোঁজেন। প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর এলে অনেকেই শুধু এ কারণেই বাসা বদলান। তেমন একজন মোহাম্ম্মদপুরের কাঞ্চন। তিনি বলেছেন, অক্টোবর মাসে বাড়িওয়ালা নোটিশ দিয়েছে, জানুয়ারি থেকে ২ হাজার টাকা ভাড়া বাড়বে। আমার সন্তানের স্কুল, সংসার খরচ সব মিলিয়ে দুই হাজার টাকা মাসে অতিরিক্ত খরচ আমি চালাতে পারব না। তাই কম বাড়ায় বাসা ভাড়া খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছি।
বেসরকারি চাকরিজীবী শাহ-আলম নামে আরও একজন বলেছেন, বাড়িওয়ালা ১ হাজার টাকা বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছে। কিস্তু আমার বেতন তো বাড়ে নাই। তাহলে কেমনে দিবো?। এমনিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দিশেহারা। তারপর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। সব মিলিয়ে আমি খুব বিপদে আছি। খাবারের মেনুতেও কাটছাঁট করতে হযচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :