শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৪, ০৪:২৭ দুপুর
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২৪, ১১:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এখনও স্বাভাবিক হয়নি রাজধানী,চরমে দুর্ভোগে শ্রমজীবীরা 

সালেহ ইমরান: [২] কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে দুর্বৃত্তদের সহিংসতা শুরু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নেমে আসে ঘোরতর দুর্দিন। এরপর সরকার কারফিউ জারি করার পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাদের জীবিকা। সহিংসতা কমে আসায় কারফিউ শিথিল করা হলেও এখনো পুরো স্বাভাবিক হয়নি ঢাকার জনজীবন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা এখনো রয়েছেন নিদারুণ কষ্টে।

[৩.১]  মঙ্গলবার উত্তরা হাউসবিল্ডিং এলাকার শ্রমিকের হাটে দেখা যায় ৪০ জনের মতো শ্রমিক ভোর থেকে টুকরি, কোদাল, শাবল নিয়ে বসে আছেন বিক্রির অপেক্ষায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিক্রি হতে পারছেন না তারা। কোনো ক্রেতা আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ৭/৮জন। এ সময় হাতাহাতিও লেগে যাচ্ছে। অনেকে কম পারিশ্রমিকও হাঁকছেন, তবুও মিলছে না কাজ। 

[৩.২] এখানেই কথা হয় টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে আসা জয়নাল মিয়ার সঙ্গে। বললেন, ‘সকাল ৮টার তে বইসা আছি। অহন ১টা বাজে। একজনও কাজে নিলো না। পাঁচজনের সংসার,  কাজ না পাইলে খামু কী ?’

[৪] শনির আখড়ায় ব্যাটারিচালিত অটো চালান জালাল শেখ। বাড়িতে অসুস্থ মা, স্ত্রীর শরীরও ভালো নয়।  ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়ে। রোজগার প্রায় বন্ধ খাকায়  খেয়ে না খেয়ে চলছেন। বাড়িতে ফিরলেই অনাহারে থাকা মুখগুলো দেখতে হয়। তখন কান্না সামলাতে পারেন না। অটো নিয়ে বের হলেই পুলিশ বিরক্ত করে, খালি টাকা চায়। দিতে না পারলে অটো নিয়ে যায়। ছাড়াতে গেলে অনেক টাকা লাগে। 

[৫] মালিবাগ এলাকায় কথা হয় দিনাজপুর থেকে আসা নির্মাণশ্রমিক  তোরাব আলীর সঙ্গে। দুই সপ্তাহ আগে একটি ভবনের কাজে এসছিলেন। কিন্তু দু’দিন পরই জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর শুরু হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও ভবনের মালিক আর কাজ ধরেননি। বাড়ি থেকে আসার সময় যে টাকা নিয়ে এসেছিলেন তার ৪/৫ দিনেই শেষ। কাজ শুরু না হওয়ায় টাকাও পাচ্ছেন না, এমনকি ফিরে যাবেন সেই গাড়ি ভাড়াটাও পাচ্ছেন না। 

[৬] মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা নুরু মিয়া ভাড়ায় সিএনজি অটো চালাতেন। ১৯ তারিখ তার অটোটি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। অটোমালিক  সেজন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছেন। এখন তিনি কোথায় এতো টাকা পাবেন? এদিকে বাসায় চুলাও বন্ধ ছিলো কয়েকদিন। বাধ্য হয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে ডিম বিক্রি শুরু করেছেন। সোমবার মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। 

[৭] মিরপুর ১০ নম্বরে একটি মার্কেটে ক্লিনারের কাজ করেন ছমিরন বেগম। স্বামী নেই। ছোট তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে বস্তির একটি ঘরে কোনোমতে থাকেন। ১৯ তারিখ এলাকাটি রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। মার্কেট বন্ধ হয়ে গেলে দিনহাজিরা হিসেবে কাজ করা ছমিরনের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এখন দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য মার্কেট খোলে। ছয়জন ক্লিনারের মধ্যে একেকদিন একেকজনকে কাজ দেয়া হয়। ফলে সেদিন বাকি পাঁচজনের  রোজগার বন্ধ। ছেলেমেয়েরা সেই কবে থেকে মুড়িচিড়া খেয়ে থাকছে। ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারেন না। 

[৮] এরকম রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকার নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের জীবনই চলছে ধুকে ধুকে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে আবার স্বাভাবিক আয় রোজগার শুরু হবে সে ভাবনায় মুষড়ে পড়েছেন তারা। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী

[৯] ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে আজ এই অবস্থা। শ্রমজীবী মানুষের এই দুর্ভোগ অপশক্তির কারণেই। আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে সাহায্য করার। তাদের আয়-রোজগার খুব শিগরিই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করি। 

এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়