মনজুর এ আজিজ: [২] দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের তীব্র গরমে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই আবার নতুন করে পানি সংকটে পড়েছে রাজধানীবাসী। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। রাজধানীর গুলশান, নন্দীপাড়া, ইব্রাহিমপুর, মণিপুর, সোলমাইদ, মাটিকাটাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলছে তীব্র পানি সংকট। সেখানে লাইনের পানিতে গোসল বা গৃহস্থালির কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। সুপেয় পানির অভাবে রাস্তায় নেমে মিছিলও করছেন নগরবাসী।
[৩] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রায় সব ক’টিতেই কমবেশি পানির সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অঞ্চল-২ এর নবাবগঞ্জ, ঢুরি আঙুলি লেন, জাফরাবাদ ও কাটাসুর, অঞ্চল-৪ এর বড়বাগ, মণিপুর, আগারগাঁও ও মিরপুর ১২, জোন-৫ এর গুলশান ১, গুলশান ২ এর ৮৩ নম্বর সড়ক এবং মালিবাগ বাজার রোড এলাকায় পানির সমস্যা রয়েছে।
[৪] এছাড়া অঞ্চল-৬ এর বনশ্রীর এফ ব্লক ও নন্দীপাড়া, অঞ্চল-৭ এর রসুলপুর, পাগলা, শাহী মহল্লা, নুরবাগ, আদর্শনগর, নামা শ্যামপুর, নিশ্চিন্তপুর, দেলপাড়া, শান্তিধারা ও দৌলতপুর এবং অঞ্চল-১০ এর ইব্রাহিমপুর, পূর্ব শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১১ এর মদিনা নগর, বাইগারটেক, মাটিকাটা এবং উত্তরা ১৫, ১৬, ১৭ নম্বর সেক্টরে পানির সমস্যা চলছে।
[৫] তবে ঢাকা ওয়াসার দাবি, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে এলাকাভিত্তিক কিছু জায়গায় সাময়িক সমস্যা রয়েছে। মূলত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অতিরিক্ত গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনের তুলনায় গভীর নলকূপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
[৬] নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কিছু জায়গায় গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন কমেছে। গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং কয়েকটি এলাকায় চাহিদার তুলনায় গভীর নলকূপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবছরই এপ্রিল-মে মাসে রাজধানীতে পানির সংকট বেশি হয়।
[৭] পানির সংকট নিয়ে গুলশানের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, গুলশানের মতো এলাকায় কয়েক দিন ধরে পানির সংকট চলছে। বিশেষ করে উত্তর গুলশান এলাকার মানুষ বেশি কষ্টে আছেন। এখানকার কমিটির লোকজনের সঙ্গে একাধিকবার ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। উত্তর গুলশান অংশে একটি পানির পাম্প বসানো জরুরি।
[৮] নন্দীপাড়ার ত্রিমোহনী এলাকায় তিনটি পানির পাম্প থাকলেও দুটি থেকে আসে ময়লা পানি। ভরসা কেবল একটিই। তাই এর সামনে পানি সংগ্রহে প্রতিনিয়ত চলে যুদ্ধ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই এলাকায় নল থেকে আসা ময়লা পানি যেমন খাওয়ার অনুপোযোগী, তেমনই রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায় না।
[৯] রাজধানীর নন্দীপাড়ার পানির সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে পানির ভোগান্তি কমবে এই এলাকার মানুষের। ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইমরানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট বসানোর কাজ চলছে। কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে তা সঠিক বলা সম্ভব নয়। সেটা প্ল্যান্ট বসানোর লোকজন বলতে পারবেন।
[১০] ঢাকা ওয়াসা দাবি করেছে, ঢাকায় পানির যে চাহিদা, উৎপাদন তার চেয়ে বেশি। তবে আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট স্থাপন এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে কিছু জায়গায় পানির সমস্যা হচ্ছে। ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, সব এলাকায় ‘রেশনিং’ করার ব্যবস্থা না থাকায় কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে কোন এলাকায় পানির সমস্যা হলে ঢাকা ওয়াসার হটলাইন নম্বরে (১৬১৬২) তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
[১১] রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পানির সমস্যা ও এর প্রতিকারের উপায় নিয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে মোবাইলে কল দিলেও তিনি কল কেটে দেন। সম্পাদনা: এল আর বাদল
এমএএ/এলআরবি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :