ডেস্ক রিপোর্ট: কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের গতিপথে (অ্যালাইনমেন্ট) পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে মেট্রোরেল যাবে মদনপুর পর্যন্ত। এ ছাড়া রেললাইন নয়, এ মেট্রোরেলের রুট এগোবে মহাসড়ক ধরে। নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রুট হলে পর্যাপ্ত যাত্রী হবে না- মূলত এমন পূর্বানুমান থেকেই গতিপথ পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এমআরটি-৪ নামের এ মেট্রোরেল দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ করতে চায় সরকার। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর কাছে ‘ডিও লেটার’ (ডেমি অফিসিয়াল লেটার বা আধা সরকারি পত্র) পাঠানো হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারের সংশোধিত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) ২০১৫-২০৩৫ অনুযায়ী, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথের পাশ দিয়ে
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৪ নির্মাণের জন্য গতিপথ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে কমিউটার রেল সার্ভিস বাড়াতে চায় রেলওয়ে। এ জন্য রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত করা হচ্ছে। পদ্মা রেল সেতুটিও করা হচ্ছে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুট ধরে। তাই এ রুটে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ হলেও পর্যাপ্ত যাত্রী মিলবে না। এটি কার্যকর হবে না অর্থনৈতিকভাবেও। এমন প্রেক্ষাপট অ্যালাইনমেন্ট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। এমআরটি লাইন ৪-এর রুট কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রাবাড়ী-সাইনবোর্ড-চট্টগ্রাম রোড-কাঁচপুর ব্রিজ-মদনপুর করার প্রস্তাব করেছে ডিএমটিসিএল। ওই লাইনের ডিপো মদনপুর এলাকায় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছেন। তার মতে, পদ্মা রেলব্রিজ কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তা ছাড়া ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার ট্রেন বাড়ানো হবে। এ কারণে কাক্সিক্ষত যাত্রী মিলবে না। তাই এমআরটি-৪ রুটের গতিপথ সংশোধন করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ইডিসিএফ-এর নমনীয় ঋণ নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ঋণচুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সুপারিশ করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ‘প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল’ (পিডিপিপি) এবং কে-এক্সিম ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমেটে ‘প্রজেক্ট প্রিপারেশন অ্যাসিস্ট্যান্স’ (পিপিএ) সুপারিশসহ ইআরডিতে পাঠাতে অনুরোধ করেছে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ডিও লেটার পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার বাইরে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার মদনপুর এলাকায় প্রথম পর্যায়ে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সম্প্রতি ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অ্যান্ড কনসেপচুয়াল ডিজাইন ফর প্রপোজড বাস টার্মিনাল অ্যান্ড ডিপো’ সম্পর্কিত সমীক্ষা নিয়ে সভা হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। ওই সভার সূত্র ধরে এখন মদনপুরে মেট্রোরেলের জন্য পৃথক ডিপো করার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএমটিসিএল। আর বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের স্টাডিতে ১০টি স্থানের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫টি স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো বাঘাইর-কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর, বিরুলিয়ার ভাটুলিয়া, মদনপুরের কাঁচপুর দক্ষিণ, কাঁচপুর উত্তর ও ভুলতা। এখন সড়ক যানের জন্য মদনপুরের কাঁচপুর এলাকায় থাকবে বাস টার্মিনাল। পাশাপাশি মদনপুর এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপো করা হবে।
এতে করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কিংবা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা চাইলে মেট্রোরেলে চেপে রাজধানীর কমলাপুরে যাতায়াত করতে পারবেন অনায়াসে। তা ছাড়া সোনারগাঁও, গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীর যাত্রীরাও অফিস করতে পারবেন এমআরটি-৪ লাইনে। তা ছাড়া মদনপুর এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। কর্মজীবী যাত্রীদের সুবিধার্থে কমলাপুর থেকে মদনপুর রুটের মেট্রো স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করছে ডিএমটিসিএল। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংশোধিত অ্যালাইনমেন্টে মেট্রোরেল নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :