শিরোনাম
◈ যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঢাকা মেডিক্যালে আটক অর্ধশতাধিক (ভিডিও) ◈ ভারতে শেখ হাসিনার ৭ মাস, যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ ◈ যে কারণে সামরিক ফ্লাইট স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন ◈ গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে অগ্নিদুর্ঘটনা, যে সতর্কবার্তা দিল সেনাবাহিনী ◈ লন্ডনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ওপর হামলার চেষ্টা (ভিডিও) ◈ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন করা হচ্ছে: শ্রম উপদেষ্টা ◈ চাঁদপুরে রমজান উপলক্ষে কার্ড ছাড়াই দেয়া হচ্ছে টিসিবির পন্য ◈ অপরাধ বৃদ্ধিতে তরুণদের মনে ক্ষোভ ও বিস্ময়! ◈ সরকারি যানবাহনের চালকরা আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা: গণবিজ্ঞপ্তি ◈ এবার মুশফিককে নিয়ে মাশরাফির আবেগঘন পোস্ট

প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর, ২০২১, ০৪:৫২ দুপুর
আপডেট : ০৮ অক্টোবর, ২০২১, ০৯:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: চিত্রনায়ক ফারুক, চিত্রালী পত্রিকা ও আমাদের দেশপ্রেম

দীপক চৌধুরী: জননন্দিত চিত্রনায়ক ফারুক দীর্ঘদিন ধরেই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি যেনো দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে আমাদের মধ্যে ফিরে আসেন এটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। এরমধ্যেই তাঁকে নিয়ে নানাগুজবও প্রচারিত হয়েছে। হঠাৎ আজ তাঁর কথা মনে পড়লো।

১৯৮৮ সালের কথা বলছি। চিত্রালী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করি। সেই সময় বাংলাদেশের ফিল্ম জগতে পত্রিকাটির দাপট ছিল ভীষণ। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার রাতে আমাদের পেস্টিং শেষ হয়ে যেতো। বুধবার পত্রিকা হকার ইউনিয়ন অফিসে যেতো, বৃহস্পতিবার মার্কেটে। সুতরাং পরবর্তী সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বুধবার বৈঠক হতো আমাদের। দিন-তারিখ মনে নেই, কোনো এক বুধবার আমাকে খোকা ভাই ( আহমেদ জামান চৌধুরী) অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। আমাকে নিতে হবে ফিল্মস্টার ফারুকের সাক্ষাৎকার। কারণ, তিনিই চিত্রালীর সম্পাদক।
-পারবা না ফারুকের ইন্টারভিউ করতে? হিরো ফারুক। তাঁর সম্পর্কে জানো তো? কিছু হোম ওয়ার্ক করে যেও। তুমি তো অল-রাউন্ডার। একঘেয়েমি রিপোর্ট-ইন্টারভিউ পাঠক মজা পায় না। এজন্যেই তোমাকে বেছে নিলাম।
-মাথা নেড়ে বলি, পারবো খোকা ভাই।

চিত্রালী থেকে টেলিফোনে বিনয়ের সঙ্গে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললাম। তখন ভীষণ ব্যস্ত তিনি। সময় দিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক। ভালো নাম আকবর হোসেন পাঠান। ডাক নাম দুলু। পলিটিক্যাল, ক্রাইম, ইকোনোমিক, কালচারেল, ফিল্ম রিপোর্ট করা মানুষ আমি। তবু, সম্পাদক সাহেবের পরামর্শে নায়ক ফারুকের ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার সঙ্গে যাবেন চিত্রালীর ফটোসাংবাদিক বেলাল ভাই। (আমার প্রিয় দুজন মানুষ এখন দুনিয়ায় নেই। ওপারে বেলাল ভাই, খোকা ভাই চলে গেছেন।)
কাকরাইল অফিসে পূর্বনির্ধারিত সময়ে গেলাম আমি ও বেলাল ভাই।

তাঁর বহু অভিনয় দেখেছি চলচ্চিত্রের পর্দায়। তাঁর অভিনীত লাঠিয়াল, সুজনসখী, মাটির মায়া, সারেং বৌ, জনতা এক্সপ্রেস, গোলাপী এখন ট্রেনে, সূর্যগ্রহণ, সখী তুমি কার, নাগরদোলা, দিন যায় কথা থাকে, নয়ন মনিসহ বহু ফিল্ম দেখেছি। বাস্তবে, এই প্রথম সরাসরি ফারুক ভাইকে দেখি।
চমৎকার একজন মানুষ, গুণী ও মেধাবী। চলচ্চিত্র সম্পর্কে দারুণ খবর রাখেন দেখলাম। আমাদের হাল-আমলের চলচ্চিত্র, তাঁর অভিনয় জীবন, নায়ক-নায়িকা জুটি প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের চমৎকার জবাব পেলাম তাঁর কাছ থেকে। সমালোচনার শূলে চড়ানোর চিন্তা আমার মধ্যে প্রথম ছিলো। কিন্তু আমি যেনো তাঁর ভক্তে পরিণত হয়ে গেলাম। একজন সাংবাদিক কখনো আবেগ প্রবণ হতে নেই। কিন্তু আমি যে, রক্তমাংসের মানুষ।

চিত্রালীতে তাঁর সাক্ষাৎকার ছাপা হলো খুব সুন্দরভাবে। যত্ন করে লিখেছিও। কিন্তু মতিঝিলে অবজারভার ভবনের মালিক হামিদুল হক চৌধুরী আমার ওপর রুষ্ট। তিনি একইসঙ্গে চিত্রালীরও মালিক। শুনলাম; আমার চাকরি চলে যাচ্ছে হিরো ফারুকের ইন্টারভিউর কারণে। হামিদুল হকের দপ্তরে ডাক পড়লো আমার। যথারীতি হাজির হলাম। তাঁর কঠিন প্রশ্ন, ‘কেনো ফারুককে চলচ্চিত্র ও শেখ মুজিব নিয়া প্রশ্ন করলা?" "চিত্রালীতে মুজিবের নাম ছাপা হইলো "জাতির পিতা" বইল্যা? সে কী জাতির পিতা? আমাদের জাতির বঙ্গবন্ধু?" ক্রমেই হামিদুল হকের কণ্ঠ কঠিন হচ্ছে।
আমি যতোই বুঝাতে চাই, এটা সাক্ষাতকার। হিরো ফারুকের মুখের উচ্চারণ, তাঁর কথা। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তিনিই এদেশের স্থপতি। সুতরাং তাকে বঙ্গবন্ধু বলতে পারবো না কেনো?

কিন্তু হামিদুল হক চৌধুরীর ধমকে আমি চুপসে গেলাম। ভেবেছিলাম খোকা ভাই পাশে রয়েছেন। তিনি আমার পক্ষে মাথা উঁচিয়ে দুটো কথা বলবেন। কিন্তু তিনি মাথা নিচু করে নিশ্চুপ বসে আছেন সোফায়। আর হামিদুল হক চৌধুরী আমাকে ইচ্ছে মতো ধুয়ে যাচ্ছেন। আমার চাকরি যাওয়ার হুঙ্কার তো আছেই। শেষ পর্যন্ত খোকা ভাই আমার চাকরি রক্ষা করেছিলেন। আজ দীর্ঘ তেত্তিরিশ বছর পর কথাগুলো মনে পড়লো। মনে পরে ইন্টারভিউতে ফারুক ভাই বলেছিলেন, "আমাদের চিন্তা ও কর্মে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হবে। তিনিই জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক।"
ফারুক ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। সিঙ্গাপুরের ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা আমরা জানি। ঈশ্বরের কাছে বলবো, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান নন্দিত তারকা ফারুক ভাইকে সুস্থ করে দাও । আর হা,ঁ বলতে ভুলে গেছি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। পরবর্তী সপ্তাহে ভারতের আনন্দলোক পত্রিকা আমার ওই লেখাটি ছেপেছিলো। বাংলাদেশের চিত্রালীর বরাত দিয়ে তারা শিরোনাম দিয়েছিলো, "বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি বানাতে চান ফারুক।"

আমরা জানি, তরুণ বয়স থেকেই হিরো ফারুক রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখী ও লাঠিয়াল দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সম্ভবত ’৭৫ সালে লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি আরো বহু পুরস্কার লাভ করেন।

সত্যিই আজ অনেক অবাক হই। যখন চারদিকেই 'হাইব্রীডের' উত্থান দেখি। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, পদ-পদবী সকলক্ষেত্রেই। সাহিত্য সম্পর্কে ন্যূনপক্ষে ধারণা নেই তবু ‘সাহিত্যিক’ হয়ে যায় একেক জন। অভিনয়যোগ্যতা, সততা, নম্রতা, ভদ্রতার দরকার নেই, প্রয়োজন শরীরে সাদা চামড়া ও চাপাবাজির। কেবলই দরকার উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ আর অর্থের। তদবির একমাত্র যোগ্যতা? অযোগ্যদের ছড়াছড়ি আর গলাবাজি থাকলেই যেনো হয়! অবশ্য, দীর্ঘদিন এদেশে জবাবদিহিতা ছিলো না। হয়তো এ কারণে! একদা সেনাছাউনি থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অস্ত্র হাতে ছিল স্বৈরাচারের। সুতরাং এখন পাল্টাতে হবে।

আজ পরীক্ষিত সত্যটি এই যে, আমাদের ঐতিহাসিক সেই স্লোগান যেনো কখনো ভুলি না, ‘জয় বাংলা’। অবশ্য বাঙালি কখনো ভুলবে না সেই স্লোগান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শে এগিয়ে চলুক বাংলাদেশ। বিশ^বাসী দেখুক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়