বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] মুদ্রানীতি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। তাদের মতে নতুন মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি কোনটার জন্যই উপযুক্ত নয়। মঙ্গলবার মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনায় এই মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
[৩] সিপিডি অবশ্য প্রবৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছে। প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সিপিডি উল্লেখ করে গত ২ বছর যাবত রেমিটেন্স ছাড়া দেশের সকল অর্থনৈতিক সূচক নিম্নগামী। কিন্তু সরকার প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছে ৭.২ শতাংশ। এটি একবারেই বাস্তব অবস্থাকে তুলে দরে না। সিপিডি এ বিষয়ে প্রকাশিত নিবন্ধে ২০২১ ও ২২ সালের প্রবৃদ্ধির হারকে প্রশ্নবোধক মনে করে। মূল্যস্ফীতির হিসাবকেও সিপিডি বলেছে ১৬ বছর আগের মানুষের ভোগ ব্যায়ের হিসাবের ভিত্তিতে করা হচ্ছে এই মূল্যস্ফীতি।এখন মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে। কোভিডে আয় কমেছে। কিন্তু মুদ্রানীতিতে যে মূল্যস্ফীতি দেখানো হচ্ছে। তা গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। সুতরাং যে দুটি মৌলিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি করেছে সেখানে সমস্যা রয়েছে। সিপিডি মনে করে দেশের প্রবৃদ্ধি হবে কে শেইপে।
[৪] মুদ্রানীতি দেখে মনে হয়েছে দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ভি শেইপে। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ ধরা হয়ছে ১৪ শতাংশ। কিন্তু গত বছর বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮ শতাংশ। সিপিডি মনে করে ৮ শতাংশ থেকে বেসরকারি ঋণ ১৪ শতাংশ করতে গেলে বৈপ্লবীক পরিবর্তন করতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে যা কখনোই সম্ভব নয়। সিপিডির হিসাবে গত ৩ বছর ধরেই ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। তাদের মতে যেখানে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে সেখানে প্রবৃদ্ধিও সম্ভব নয় আবার বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান ও সম্ভব নয়।
[৫] সিপিডি ব্যাংকের মাধ্যমে কোভিড পরিস্থীতিতে প্রণোদণা ঋণের বিষয়ে বলে এই ঋণ যে সবাই পায়। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো এই ঋণ যত বেশি পাবে তত অর্থনীতি উপকৃত হবে বলে মনে করে তারা। সিপিডি কোভিডকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তা বৃদ্ধির জন্যও সুপারিশ করেছে।
[৬] রেমিটেন্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করে সিপিডি। তাদের হিসাবে এভাবে বর্ধিত রেমিটেন্স অর্থনীতিতে তারল্য বৃদ্ধি করছে। গত বছর ২৪ বিলিয়ন রেমিটেন্সের জন্য বাজারে আড়াই লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান, ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান সরকারি ব্যাংকগুলোতে তারল্য দ্বিগুন ও ইসলামী ব্যাংকে ৩ গুন তারল্য হয়েছে। এই তারল্যের কারণে ব্যাংকে সুদের হার কমে গেছে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য চিন্তার বিষয়।
[৭] পরিশেষে অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, বিনিয়োগ গ্রুথ সীমিত। এখন মানুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে রয়েছে। পুরো ব্যাকসিনেশন না হলে অর্থনীতি রিকভারি করা সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।
[৮উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেও সংশয় রেখেছে। সেখানে গভর্নর চলতি বছরের মুদ্রানীতি বাস্তবাণ হবে না বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোবিডে আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় অর্থনীতিই ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্বিতীয়ত বলা হয়, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ যদি কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধি না করে, তৃতীয়ত মন্দ ঋণ ও মূল্যস্ফীতি মুদ্রানীতি বাস্তবায়ণে সমস্যা করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :