মনিরুল ইসলাম রাজিব: সমাজ ব্যবস্থার দ্রুত শিল্পায়ন ও নগারায়ন রুপান্তরের ফসল হলো কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধ। সত্তর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী গ্যাং কালচার প্রবেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর গ্যাং এর নিয়ন্ত্রক হয় সমাজের কিছু বড় ভাই, তবে বড় ভাই ছাড়াও পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন শহর ও বস্তির পরিবেশ, সমাজজীবনে বিরাজ মান নৈরাজ্য ও হতাশা, মাদক, অনলাইন গেমস,টিকটক ও লাইকির মতো অপসংস্কৃতি কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে।
কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে কিছু অপরাধ লক্ষ্য করা যায়...
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস না করা,সহপাঠীদের সাথে ঝগড়াঝাটি করা, পরীক্ষায় নকল করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ।
১. মাদক গ্রহণ করা।
২. বিনা টিকিটে বাস, ট্রেনে ভ্রমণ করা।
৩. পর্ণ সিনেমা দেখা।
৪. রাস্তা ঘাটে মারপিট, চুরি ছিনতাই করা।
৫. পিতা মাতার দাম্পত্যকলহ লেগে থাকা।
৬. পিতা মাতার পুর্নবিবাহ
৭. পিতা মাতার সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা
৮. অতিরিক্ত শাসন করা
৯. খারাপ সঙ্গীর সাথে চলাফেরা করা।
১০. সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব।
১১. টিকটক,লাইকি, অনলাইন গেমসের মতো অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ।
১২. বিলাসী জীবন যাপনের মনোভাব।
১৩. অল্প বয়সে নিজেকে সুপার হিরো বা নিজের চিন্তা ও কাজকে সঠিক ভাবা।
এজন্যই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ' তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই'
এই বয়সে ছেলেমেয়েদের অদম্য সাহসীকতাই তাকে কিশোর অপরাধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিশোর অপরাধ দেশের সার্বিক কল্যাণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
কিশোর অপরাধ কমানোর জন্য আমাদের করণীয় :
১. প্রথমে পিতা মাতাকে তার সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে তার সন্তান কার সাথে মেলামিশা করে, ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কিনা, পড়াশোনা করছে কিনা, সন্ধ্যার আগে বাসায় আসছে কিনা,স্কুলের পড়া নিয়মিত করছে কিনা এবং সন্তান কে টাকা দিতে হবে খুব হিসাব করে, প্রয়োজন ছাড়া টাকা পয়সা একদম দেওয়া চলবে না।
২. সন্তানের সামনে পিতা মাতা কোন ঝগড়াঝাটি করতে পারবে না।
৩. শিশু কিশোরদের অপরাধী হিসাবে না দেখে তাদের দৃষ্টি ভংগী বদলাতে হবে।
৪. টিকটক, লাইকি, অনলাইন গেমস এগুলো বন্ধ করতে হবে,
৫. ১৮ বছরের নিচে এন্ডড্রোয়েট মোবাইল চালাতে পারবে না।
৬. রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন গুলো পরিচালিত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং তাদের আন্দোলন, দাবি প্রতিবাদ সব কিছুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠাবে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৭. ১৮ বছরের নিচে কোন কিশোর কিশোরীকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে হবে।
৯. খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে।
১০. সন্ধ্যার পর কোন আড্ডা দেওয়া যাবে না, সেই দিকে নজর রাখতে হবে।
১১. এলাকার বড় ভাই নামক ব্যক্তি যে কিনা কিশোরদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. অপরাধ বড় আকার ধারণ করার আগেই অপরাধী কে গ্রেফতার করতে হবে।
১৩. সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিকতা বোধের শিক্ষা দিতে হবে।
১৪. আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কে সঠিক ভাবে গ্যাং সম্পর্কে ডাটা সংগ্রহ করে কিশোরদের মুল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সিলিং করতে হবে।
আজকের কিশোর আগামীতে দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তাই এদের প্রতি সহনশীল হতে হবে। তাহলেই কিশোর গ্যাং মুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে উঠতে পারবে।
আমাদের দেশের কিশোররা সত্যিকার অর্থে সোনার ছেলে হিসাবে তৈরি হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই আজকের কিশোর আগামীর ভবিষ্যৎ, এদের কে সঠিক পথ দেখানো আপনার আমার নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক : মনিরুল ইসলাম রাজিব,
সভাপতি, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক গাজীপুর মহানগর।
আপনার মতামত লিখুন :