মনিরুল ইসলাম : [২] জাতীয় সংসদে আজ ৩ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১তম আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন। বর্তমান সরকারের এটি টানা ১৩তম। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট। তবে করোনাকালীন দ্বিতীয় বাজেট পেশ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে গত জুনে ২০২১- ২০২১ সালের বাজেট পেশ করা হয়। এটি ছিলো করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম বাজেট পেশ। এবার হচ্ছে দ্বিতীয়। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজেট পেশ করা হচ্ছে।
[৩] চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়বে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার। তাতে এই বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়। টাকার অঙ্কে এই বাজেট চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।
[৪] এদিকে, সংসদে বাজেট পেশের আগে ওইদিন বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পর অর্থ বিলে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি সেদিন তার সংসদ ভবন কার্যালয়ে অবস্থান করবেন।
[৫] জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাত্র ৫দিন আলোচনা হবে। আলোচনায় নির্ধারিত সংখ্যক সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য অংশ নিবেন। আগামী ২৯ জুন অর্থবিল ও পরদিন ৩০ জুন বাজেট পাস হবে।
[৬] অন্যদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতকে বিশেষ অগ্রধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আগামী বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে বেকার হওয়া লাখ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত করা নিয়ে থাকবে বিশেষ দিক নির্দেশনা। করোন পরবর্তী সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনাও রাখা হবে বাজেটে।
[৭] সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এই অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে টাকার অঙ্কে জিডিপি’র মোট আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এতে বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে জিডিপি’র ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
[৮] সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ হবে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের সার্বিক ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ শতাংশ)। সে হিসাবে আগামী বাজেটে ঘাটতি বাড়ছে ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
[৯] জানা যায়, আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণে বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩ কোটি টাকা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হতে পারে। বাজেট ঘাটতির অবশিষ্ট ৮৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
[১০] সূত্র জানায়, আগামী বাজেট ঘাটতি পূরণে সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে সরকার। এর বাইরে ঋণ হিসেবে আরও প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে।
[১১] সূত্র আরও জানায়, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গতিধারা পর্যালোচনায় এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :