আশরাফ আহমেদ: [২] এ শিল্পায়নের যুগে নগরায়ন, শহরায়ন, বসতবাড়ি নির্মাণ ও রাস্তাঘাট নির্মাণের লক্ষ্যে নির্বিচারে বন উজাড় করা হচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দেশের সবুজ বৃক্ষরাজি অপরিকল্পিতভাবে বিনাশ করতে সংকোচ বোধ করেছেন না অনেকেই। তাছাড়া নিজের
উপকারে না লাগলেই আমরা সেই গাছকে আর গুরুত্ব দেই না হারহামেশায়াই কেটে ফেলি। ফলে প্রকৃতি থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে অতি মূল্যবান ঔষধিগুণ সম্পন্ন পিতরাজ বা বদ্দিরাজ গাছ।
[৩] কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বনজঙ্গল, রাস্তার পাশে, ঝোপঝাড় ও বাড়ীঘরের আনাচে কানাচে প্রচুর পরিমাণে রয়না বা বদ্দিরাজ গাছ দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর তেমন দেখতে পাওয়া যায় না এই রায় না গাছটি। পিতরাজ বা রয়না এখন অনেকটাই বিলুপ্তির খাতায় চলে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বদ্দিরাজ গাছটি অজানা অজানা। অথচ গ্রামের বাড়িতে শৈশবে অনেকেই এই ফলের বীজ কুড়িয়ে এনে ঘরে রাখত। কারণ ১ কেজি হলে ভাংগারীওয়ালার কাছে বিক্রি করে ১/২ টাকা পাওয়া যেত যা দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো শনপাপড়ি, খাজা, কটকটি, বাদামিটানা, নারিকেলি কিনে খাওয়া যেত ৷ এগুলো ছিল আমাদের দূরন্ত শৈশবের কিছু স্মৃতি। যা কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে। এখনকার বাচ্চাদের জন্য সেই উদার প্রকৃতি অনেকেই টাই সীমিত হয়ে গেছে, গাছগুলোও হারিয়ে গেছে।
[৪] পিতরাজ, বা রয়না বা বদ্দিরাজ এর বৈজ্ঞানিক নাম Aphanamixis polystachya। এটি মেলিয়াসি পরিবারের একটি প্রজাতি। আঞ্চলিকভেদে নানান নামে একে ডাকা হতে পারে। এর ফল লাল, বীজ অনেকটা কালচে কফি রঙের।
[৬] এছাড়া বাংলাদেশের গ্রামে এর তেল দিয়েএকসময় প্রদীপ জ্বালানো হত। যে সব কৃষক সকাল সন্ধ্যা মাঠে কাজ করেন, ক্ষেত নিড়ানি করেন, তারা মশা মাছি কীট-পতঙ্গ থেকে অব্যাহতি পাবার জন্যে রয়নার তেল গায়ে মেখে মাঠে কাজ করতে যান বা যেতেন। তবে এলাকায় রয়না গাছের প্রাচুর্য থাকলেই এই অভ্যাস করা সম্ভব।
[৭] আসলে রয়না একপ্রকার ইন্সেক্টিসাইডের কাজ করে। গ্রামে চাল, ডাল সংরক্ষণ করা হয় দীর্ঘদিনের জন্য, সেসব চাল- ডালে পোকা ধরে যায় দীর্ঘদিন থাকার পরে। এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্যে রয়না গাছের ঝরাপাতা এবং রয়না ফল ব্যবহার করা হয়।
[৮] এখন এই তেল দিয়ে বায়োডিজেল তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এছাড়া রক্তবাহিত রোগ, বিশেষত যকৃৎ ও প্লীহার রোগকে রহিত করে বলে সংহিতায় এর এক নাম রোহিতক।
[৯] মোটা স্বাস্থ্য কমানোর জন্যও রয়নার ছাল খুব উপকারী। ৫-৬ গ্রাম রয়না গাছের ছাল ৪ কাপ পানিতে জ্বাল দিতে দিতে যখন এক কাপে এসে ঠেকবে তখন নামিয়ে নিতে হবে। সকাল বিকাল দুবেলা এই ঘন দ্রবণ খাবার সময় সম পরিমাণ পানি মিশিয়ে নিতে হবে। খাবার পর এই ভেষজ পানীয় পান করাই উত্তম। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষানাবেক্ষন , গাছপালা কাটার মহোৎসব, বন জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগের অভাবে এ ভেষজ গুনসম্পন্ন উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তির পথে। সম্পাদনা: হ্যাপি