সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন: কেউ কারোর কর্মের জন্য দায়ী নয়। আবার হেদায়েতের মালিক আল্লাহ তায়ালা। আমাদের কাজ প্রচার করা। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন কী বলে, তা পর্যালোচনা করা দরকার।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন :অতএব, আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, আপনি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র, আপনি তাদের দায়গ্রস্ত কর্মনিয়ন্ত্রক নন (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা গাশিয়াহ)। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনার দায়িত্ব তো শুধু পৌঁছে দেওয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা আল-ইমরান)। তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসুলের এবং সতর্ক হও; কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রেখো, আমার রাসুলের দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা মায়েদাহ)। রাসুলের দায়িত্ব তো শুধু প্রচার করা। আল্লাহ জানেন, তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা মায়েদাহ)। আর আপনি বিতাড়িত করবেন না তাদের, যারা সকালে ও বিকালে তাদের রবের ইবাদত করে, শুধু তারই সন্তুষ্টি কামনা করে। আপনার ওপর তাদের কোনো কর্মেরই জবাবদিহির দায়িত্ব নেই এবং তাদের ওপরও আপনার কোনো কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব নেই, যে কারণে আপনি তাদের বিতাড়িত করবেন। অন্যথায় আপনি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা আনআম)। রাসুলদের দায়িত্ব তো শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেওয়া (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা নাহল)। আর যদি তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলো, তবে জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তীরাও নবিদের মিথ্যাবাদী বলেছিল। রাসুলের দায়িত্ব স্পষ্টভাবে পয়গাম পৌঁছে দেওা ছাড়া আর কিছু নয় (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা আনকাবুত)। আর আপনার কোনো দায়িত্ব নেই, যদি সে নিজে পবিত্র পরিশুদ্ধ না হয় (সূত্র :আল-কোরআন, সুরা আ’বাসা)। এ রকম ১২টি আয়াত আছে, যার মাধ্যমে পরিষ্কার যে কারো কর্মের জন্য কেউ দায়বদ্ধ নন।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, যার যার আমল তার তার। আমাদের জন্য আমাদের কর্ম (আমল) এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম (আমল)। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আটটি আয়াত রয়েছে। যার যার আমল বা কর্ম তার তার, কারো কর্মের জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন :তারা ছিল এক উম্মত, যারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তা তাদের, আর তোমরা যা কর তা তোমাদের। তারা যা করত, সে ব্যাপারে তোমাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না (সূত্র :আল-কোরআন ২ :১৩৪)। অতএব, আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিতে থাকুন এবং আপনাকে প্রদত্ত নির্দেশের প্রতি অবিচল থাকুন। আর আপনি তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না। বলুন :আল্লাহ যে কিতাব নাজিল করেছেন, আমি তাতে ইমান রাখি আর আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে। আল্লাহ আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের জন্য আমাদের কর্ম (আমল) এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম (আমল)। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদ নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একত্র করবেন এবং তারই সমীপে সবার প্রত্যাবর্তন (সূত্র :আল-কোরআন ৪২ :১৫)। উক্ত আয়াতসমূহের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে যার যার আমল তার তার।
প্রত্যেকে নিজ কর্মের জন্য দায়বদ্ধ। ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী’—এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ৫০টি আয়াত রয়েছে, যা থেকে আমি কয়েকটি উপস্থাপন করছি :মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন :এ কারণে যে, আল্লাহ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী (সূত্র :আল-কোরআন ১৪ :৫১)। স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে কথা বলবে এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ ফল দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না (সূত্র :আল-কারআন ১৬ :১১১)। এটা তোমার কৃতকর্মেরই ফল; কেননা, আল্লাহ তো বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না (সূত্র :আল-কোরআন ২২ :১০)। আর যারা ইমান এনেছে এবং তাদের সন্তানেরা ইমান আনায় তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদের তাদের সঙ্গে শামিল করে দেব এবং তাদের কর্ম বিন্দুমাত্র হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী (সূত্র :আল-কোরআন ৫২ :২১)। প্রত্যেক মানুষ নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ (সূত্র :আল-কোরআন ৭৪ :৩৮)। সুতরাং যারা কোরআনের বিধানকে লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে ইমানের সীমা থেকে বের করে দিয়ে দেশ ও সমাজে ফিতনার সৃষ্টি করছেন, তারা মহাপাপ করছেন। অথচ এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন :ফিতনা হত্যার চেয়ে মহাপাপ (সূত্র :আল-কোরআন ২ :২১৭)। পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চেও না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না (সূত্র :আল-কোরআন ২৮ :৭৭)। অতএব, এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
lলেখক :চেয়ারম্যান, তাসাউফ ফাউন্ডেশন
আপনার মতামত লিখুন :