ডেস্ক রিপোর্ট : আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুপস্থিতিতে ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কাণ্ডারি কে হবেন, তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই কওমি মহলে চলছিল আলোচনা। গত শুক্রবার দেশের প্রবীণ এই আলেমের মৃত্যুর পর প্রসঙ্গটি আরো দানা বেঁধেছে। রাজধানী ঢাকা না চট্টগ্রাম থেকেই নির্বাচিত হবেন হেফাজতের আমির, তা নিয়েও সংগঠনের ভেতরে চলছে নানা জল্পনা। শুধু হেফাজত নয়, মৃত্যুর আগের দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মূঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম (মহাপরিচালক) পদ থেকে আল্লামা শফীর পদত্যাগ করার পর থেকে পদটি নিয়েও শুরু হয় আলোচনা।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর কারণে একই সঙ্গে কওমি মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং উচ্চতর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তন আসছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান ও কমিটির দিকে এখন সবার চোখ। দেশের প্রবীণ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান ও কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
এসব কমিটি ও প্রতিষ্ঠানে থাকা একাধিক শিক্ষক ও নেতা জানান, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি এবং বড় ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামী শিক্ষা, প্রচার ও প্রসারে প্রবীণ এ আলেমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহি বলেন, গঠনতন্ত্রের আলোকে নেতাকর্মীরাই হেফাজতে ইসলামের নতুন আমির নির্বাচিত করবেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে হাটহাজারী বড় মাদরাসার মহাপরিচালক নির্বাচন করবে মাদরাসার শুরা কমিটি। একইভাবে যথানিয়মে কওমি মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হবে।
ঢাকা মহানগর হেফাজতের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সহসভাপতিদের মধ্য থেকে যে কেউ হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হতে পারে।’
জানা গেছে, হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনের এক নম্বর সহসভাপতি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ভারপ্রাপ্ত আমির হওয়ার কথা। তিনি বয়সেও সবার বড়। তাঁকেই হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আপাতত নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদি তিনি দায়িত্ব নিতে অপারগ হন, তাহলে সহসভাপতিদের মধ্য থেকে যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে দেখা যেতে পারে।
হেফাজতের আরেক নেতা জানান, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ছাড়াও সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমি, হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের নামও ভারপ্রাপ্ত আমির পদের আলোচনায় আছে।
তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, হেফাজত নেতাদের কোন্দলের কারণে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে জরুরি কাউন্সিলও করতে পারে সংগঠনটি। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলে সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হয়েও যেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আমিরের মৃত্যুর পর এ বিষয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা আমাদের কারো নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার অভিমতের ভিত্তিতে বিষয়টি ফয়সালা করা হবে।’
জানা গেছে, আল্লামা শফীর মৃত্যুর আগে হাটহাজারী মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রকাশ্যে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির তিন গ্রুপই নিজেদের শীর্ষ নেতাদের হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বে আশা করছে। এদের মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানি। আরেক গ্রুপে রয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহি। অন্য গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী।
মৃত্যুর আগের দিন আল্লামা শফীর পদত্যাগের পর হাটহাজারী বড় মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হিসেবে আছেন মাওলানা শেখ আহমদ। তবে এ পদে শিগগিরই নতুন নিয়োগ দেবে মাদরাসাটির শুরা কমিটি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কওমি ঘরানার বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গড়ে তোলেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কওমি ঘরানার সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলকে এক ব্যানারে নিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। ১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ ও রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন আল্লামা শফী। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে খবরের শিরোনাম হন।
সূত্র- কালেরকণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :