শিরোনাম
◈ পাঠ্যবইয়ে আ’লীগ ‘সবচেয়ে বড় দল’, বিএনপির জন্ম ‘সামরিক শাসনামলে’ ◈ যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হাসিনার দুর্নীতির ফিরিস্তি খুঁজতে ◈ নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কারের বৈধতা দিতে পারব না: ফখরুল (ভিডিও) ◈ ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: অভিযোগ প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের ◈ রাখাইনে জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত, পুড়েছে শতাধিক বাড়িঘর ◈ তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে আট হাজারি ক্লাবে  ◈ সমন্বয়ক সারজিসের ইলিয়াসকে উপদেষ্টা বানানোর দাবি, যা জানা গেল ◈ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিয়ে মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্য সরকার জরুরি ◈ শেষ ওভারে ২৬ রান, সোহান তান্ডব ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে রংপুরের দুর্দান্ত জয় ◈ তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, জানালেন মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২০, ০৯:৫৪ সকাল
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২০, ০৯:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা, ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ লাখ পরিবার

মিনহাজুল আবেদীন : [২] কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার 'মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী কলেজ'-এর সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক আরিফুর রহমান। নন-এমপিও শিক্ষক তিনি। করোনার কারণে গত মার্চে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার বেতন-ভাতাও বন্ধ। সমকাল

[৩] বাবা-মা ও দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্য ছয়জন। তাদের মুখে আহার তুলে দিতে এপ্রিল মাস থেকে স্থানীয় কাতলাগাড়ি বাজারে গরু-ছাগলের ওষুধ (ভেটেরিনারি মেডিসিন) বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এভাবে পাওয়া যৎসামান্য আয় দিয়েই কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

[৪] এ শিক্ষক বলেন, 'লকডাউনের কারণে বাজারেও তেমন লোকজন আসে না। আবার এলেও সবার তো এ ধরনের ওষুধ লাগে না। কোনো রকমে পেটেভাতে বেঁচে আছি। কলেজে আমি অনার্স পড়াই। পেটের দায়েই গরু-ছাগলের ওষুধ বেচতে হচ্ছে এখন!' একই জেলার 'কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ'-এর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক ইমরুল হোসেন। তিনিও অনার্সের শিক্ষক। নিজেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। কলেজ থেকে টানা তিন মাস বেতন না পেয়ে পেটের দায়ে এই শিক্ষক কষ্টসাধ্য কৃষিকাজে নেমে পড়েছেন।

[৫] ইমরুল হোসেন বলেন, 'নিজের দুর্দশার কথা বলতে খুব লজ্জা লাগে! বেশি কিছু বলতে চাই না, বুঝতেও চাই না। শুধু বুঝি- পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে হবে।'

[৬] আরিফ ও ইমরুলের মতো দেশের কয়েক হাজার শিক্ষক এখন নিজ পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন। পেটের ভাত জোগাড়ের চেষ্টায় দারিদ্র্যের সঙ্গে আপ্রাণ লড়াই করে যাচ্ছেন। কেউ রাজমিস্ত্রি, আবার কেউ মৌসুমি ফলও বিক্রি করছেন। কেউ-বা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালাচ্ছেন।

[৭] এমনই এক শিক্ষক দিনাজপুরের পার্বতীপুরের গোলাম কিবরিয়া। এখন তার হাতে চক-ডাস্টারের বদলে তুলে নিয়েছেন কোদাল ও ঝুড়ি।

[৮] মেহেরপুরের কিডস ওয়ার্ল্ডস স্কলারস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সুজন ইসলামেরও। পেটের দায়ে চালাতে শুরু করেছেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। তিনি বলেন, 'কোভিডের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় আমি নিরূপায়। এলাকার অনেকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে।'

[৯] রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গ্রিন লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক কাওসার হোসেন এখন মৌসুমি ফল আম বিক্রেতা। নিজের স্কুলের সামনেই আম বিক্রি করেন।

[১০] রাজধানীর কাজীপাড়ার লিটল ফ্লাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ তানজীম বলেন, 'কেমন বেকায়দায় পড়েছি, বুঝতেই পারছেন! শ্রম বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো উপায় তো দেখি না। করোনার কারণে শিক্ষকদের টিউশনিও নেই।'

[১১] কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজ ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, 'আমরা সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে বেসরকারি স্কুলগুলো বন্ধের হাত থেকে রক্ষা পাবে। শিক্ষকদের মর্যাদাও রক্ষা পাবে।'

[১২] ফ্রেন্ডশিপ কিন্ডারগার্টেন সোসাইটির চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, 'সরকার এই সেক্টরের উন্নয়ন না ঘটালে আগামী বছরেই শিক্ষা খাতে বিরাট ধস নামবে।'

[১৩] সংকটের কারণ :করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ও যথাসময়ে টিউশন ফি আদায় না হওয়ায় বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অন্তত ১৪ লাখ বেসরকারি শিক্ষক পরিবারে এখন দিশেহারা অবস্থা। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা।

[১৪] সাড়ে ৯ হাজার নন-এমপিও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় এক লাখ ১০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এ বছর দুই হাজার ৬১৫ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় এদের মধ্যে ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর সরকারি বেতনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।

[১৫] 'বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের' সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, 'নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট-টিউশনি করেন। কিন্তু এখন সবই বন্ধ। প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষকের দুর্দশার খবর পাই, অনেকে কান্নাকাটি করেন। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না।

[১৬] কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ারা ভূঞা বলেন, 'অভিভাবকরা টিউশন ফি দিচ্ছেন না, তাই আমরাও শিক্ষকদের বেতন ও বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না। সরকার সহায়তা না করায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প আর কোনো উপায় ছিল না।'

[১৭] স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, কোভিডের মধ্যে আমাদের শিক্ষকরা চরম কষ্টে জীবন যাপন করছেন। আর কতদিন বেতন ছাড়া চাকরি করব আমরা? আমার শিক্ষকরা না খেয়ে আছেন, ভাই!'

[১৮] সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়