মঈন চিশতী : [২]
কবুল তুমি করো খোদা
এই গরিবের হাত
বন্দেগিতে পার করব
ইতেকাফের রাত।
[৩] ‘ওয়া আন তাহহিরা বাইতিয়া লিত্তায়িফীনা ওয়াল আকিফীনা ওয়ার রুক্কায়িস সুজুদ’। এবং পবিত্র রাখবে আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী আর রুকু-সেজদাকারীদের জন্য। ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি আল্লাহর এ নির্দেশ ছিল। এ পবিত্রতার সঙ্গে উন্মুক্ততাও সম্পৃক্ত। কিন্তু আজ বায়তুল্লাহ সর্বসাধারণের জন্য রুদ্ধ হয়ে আছে। এ ধারা বিশ্বের অন্যান্য মসজিদও অনুসরণ করছে। তাই এবার ইতেকাফ হচ্ছে নির্জন পরিবেশে। ইতেকাফ হল কোথাও অবস্থানের জন্য নিজেকে সংযুক্ত করে রাখা। ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্য দুনিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর দুয়ারে পড়ে থাকা।
[৪] ইবনুল কাইয়্যুম বলেন, ইতেকাফের প্রাণ হল আত্মাকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নেয়া। আগেকার দিনে প্রতিটি বড় মসজিদে চিল্লা কোঠা (সংযুক্ত ঘর) থাকত। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোয় তেমন ব্যবস্থা নেই। ইতেকাফের প্রয়োজনে রমজানে পর্দার আড়াল করা হয় মাত্র।
[৫] তাই বলে করোনায় কী আমাদের ইতেকাফ বন্ধ হয়ে যাবে? এক ভাই বললেন, করুণাময় আমাদের করোনা দিয়ে করুণা করেছেন। মসজিদগুলো সাহুন রাউন (লোক দেখানো ও আলস্যে ভরা) নামাজিতে ভরে গেছিল, এবার দেখা যাবে প্রকৃত নামাজি কে? বাড়িতে তার নামাজের পরিবেশ কী? আর মসজিদগুলো থেকে এমনকি খানায়ে কাবা থেকে আল্লাহ আমাদের দূরে সরিয়ে দিলেন কেন?
[৬] আজকাল মসজিদে শুধু আলস্যে ভরা লোক দেখানো ইবাদত নয়, বরং নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের উপস্থিতিতে সমাজের কর্তাব্যক্তিরা মানুষের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ান। যা সম্পর্কে আল্লাহ সাবধান করে বলেছেন, ওয়াইলুল্লি কুল্লি হুমাজাতিল লুমাজা। অগোচরে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। এমনকি, কখনও ভিন্নমতের মুসল্লিদের বেরও করে দেয়া হয়। আল্লাহ তা সহ্য না করে এখন সবাইকে বের করার ব্যবস্থা করেছেন।
[৭] মওলানা ভাসানী ক্ষমতাসীন বা সাম্রাজ্যবাদীদের কোনো বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ‘খামুশ’ হুঙ্কার দিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে নেমে পড়তেন, পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে ঘাড়ের রুমাল বিছিয়ে রাস্তায়ই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন, পুলিশ ঠায় দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিত আর ভক্ত কর্মী বাহিনী পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। একবার গভর্নর হাউসে আইয়ুব খান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপে আমন্ত্রণ জানান তাকে। তিনি সেখানে গেলে তাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক সচিব ভেতরে যান।
[৮] আইয়ুব খান সম্ভবত মওলানাকে একটু যাচাই করতে চাচ্ছিলেন। তাই আসতে দেরি করলেন। মওলানা ভাসানী এ ফাঁকে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। একটু পর আইয়ুব খান এসে দেখেন মওলানা নামাজ পড়ছেন, দীর্ঘ ক্বিয়ামে লম্বা রুকু-সেজদা দিয়ে নামাজ শেষ করেন। আর আইয়ুব খান মওলানার নামাজ শেষ করার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
[৯] ইত্তাক্বু ফেরাসাতুল মু’মিন। মুমিনের দূরদর্শিতাকে ভয় কর। ইতেকাফ নির্জন পরিবেশে হলে এর হক পুরোপুরি আদায় হয়। আমরা যারা ইতেকাফে বসেছি আসুন এবারের করোনা আক্রান্ত এ পরিবেশটি নেয়ামত হিসেবে নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলি। আল্লাহকে বলি, হে আল্লাহ আমাদের মহামারীমুক্ত পৃথিবী উপহার দিন।
Email : mueenchishty@gmail.com
আপনার মতামত লিখুন :