শিরোনাম
◈ ‘জাতির পিতা’ বিধান বিলুপ্তির সুপারিশ: সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের ◈ বেনজীরের বিতর্কিত বক্তব্যে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ (ভিডিও) ◈ হঠাৎ ট্রাম্পকে যে কারণে ‘টোপ’ দিলেন জেলেনস্কি ◈ ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে র‌্যাব ◈ আপিল ট্রাইব্যুনালে জয়ী পুলিশ সদস্যদের চাকুরীতে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজা পড়লেন বৈষম্যবিরোধীর নেতাকর্মীরা ◈ সেদিন গাজীপুরে কি ঘটেছিল? আহতদের মুখে ঘটনার বর্ণনা ◈ টিউলিপের নামে গাজীপুরে বাংলো, যা বলছে লেবার পার্টি ◈ ফরিদপুরের সালথায় চার কৃষকের ১০ ঘরে আগুন, সব পুড়ে ছাই

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২০, ১২:০০ দুপুর
আপডেট : ১৫ মে, ২০২০, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনায় কোরআনে হাফেজগণ বিপাকে

প্রফেসর ড. এম মেসবাহ উদ্দিন সরকার : জীবনঘাতী করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কলকারখানা সবকিছুই যখন স্থবির হয়ে আছে তখন দেশের অর্থনীতি এবং সর্বস্তরের মানুষের মনকে চাঙ্গা রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক পরিকল্পনা ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।

খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও অসহায় মানুষের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ২.৫২ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এবং কওমি মাদ্রাসাসমূহে ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর জন্য ১০০ কোটি টাকা (সূত্র : Barta 24.com, ৪ মে, ২০২০)। অন্যান্য কর্মহীন শ্রেণি-পেশার মানুষও হয়তো-বা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।

রমজান মাসের বিশেষ আকর্ষণ আল্লাহর মেহমান কোরআনের হাফেজগণও তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। কারণ মহামারি করোনা ঠেকাতে এই বার মসজিদে খতম তারাবি বন্ধ আছে। যদিও ৭ মে দুপুর থেকে মসজিদ উন্মুক্ত করে দেওয়া ঘোষণা এসেছে। সেক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধের সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।

অর্থাত্, বোঝা যাচ্ছে যে করোনার ভয়ে তারাবি নামাজে মুসল্লির সমাগম খুব একটা হবে না। ফলে হাফেজদের বেকারই থাকতে হচ্ছে। অর্থাত্ কাজ নেই—বেতন নেই। আবার ওপরে বর্ণিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায়ও পড়ছে কি না তাও স্পষ্ট নয়। এদিকে কোরআনের হাফেজ হওয়ায় কারো কাছে লজ্জায় হাত পাততেও পারছে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে আছেন তারা। এমতাবস্থায় হাফেজদের জন্য একটি বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়িত হলে আলেম সমাজ খুবই খুশি ও উপকৃত হবে।

রমজান মাসে হাফেজগণ মসজিদে খতম তারাবি পড়ান এবং খুব সামান্যই বেতন পেয়ে থাকেন। বড়োজার ১০, ২০, ৩০ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো কম। মুসল্লিরা প্রতিদিন ১০ টাকা, ২০ টাকা দিয়ে এই অর্থ জোগাড় করেন। মাস শেষে ২৭ রমজান অর্থাত্ লাইলাতুল কদরের রাতে আখেরি মোনাজাতের পর হাফেজ সাহেবদেরকে ঐ টাকা দেওয়া হয়। যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে কোরআন খতমের বিনিময়ে টাকা নেওয়া বিধান নেই। যাহোক, নামাজ শেষে মুসল্লিরা হাফেজদেরকে ধরে কোলাকুলি করেন এবং মাথায় হাত দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দোয়া দিয়ে যান। কিন্তু এবার সেই সুযোগটুকুও নেই।

এদেশের অধিকাংশ হাফেজই অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে আসা। দরিদ্র পিতা-মাতা যখন সন্তানদেরকে সামান্য ভর্তি ও বেতনের টাকা দিয়ে নিজ এলাকার স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য থাকে না, তখনই দূরের কোথাও বিনা মূল্যের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। নিষ্পাপ ফেরেশতাতুল্য শিশুগুলো মা-বাবার আদরবঞ্চিত হয়ে দূরের ওই মাদ্রাসায় পড়ে থাকে।

পবিত্র কোরআন মজিদে ১১৪টি সুরা ও ৬২৩৬টি আয়াত রয়েছে। হাফেজ হওয়ার এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে সাধারণত তিন থেকে ছয় বছর লাগে। এই কয়েকটি বছর তারা খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করে কাটায়। যেমন নিম্নমানের খাবার, গাদাগাদি করে থাকা ইত্যাদি। এভাবে অনেকটা মা-বাবার অজান্তেই কেউ হয়ে ওঠে কোরআনের হাফেজ, কেউ হয়ে ওঠে যুক্তিবাদী মাওলানা।

হাফেজগণও এখন দেশের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছে। গণতান্ত্রিক ধারায় এখন অনেক কোরআনের হাফেজ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য হয়ে গ্রাম উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। গ্রামের লোকেরা সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক সময় হাফেজ এবং ইমামদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রায়ই কোরআন খতমের আয়োজন করা হয় এই হাফেজদের মাধ্যমেই।

মসজিদভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষায় এদের ভূমিকা অনেক। সাধারণত এরা খুব মেধাবী হয়। অত্যন্ত অল্পবয়সে পুরো কোরআন শরিফ মুখস্থ করে ফেলে। বিদেশেও তাদের অনেক সুনাম আছে। আন্তর্জাতিক কেরাত প্রতিযোগিতায় বিগত কয়েক বছর যাবত্ বাংলাদেশের খুদে হাফেজগণ শীর্ষস্থান অধিকার করে আসছে। অনেকেই স্কলারশিপ নিয়ে মক্কা, মদিনা, মিশরসহ আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছে।

প্রতি বছর রমজান মাসে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে খুদে হাফেজদের কোরআন প্রতিযোগিতা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। দৈবচয়নের মাধ্যম কোরআন শরিফের মধ্য থেকে ছোট্ট একটি আয়াত পড়ে থাকেন মডারেটর। নিষ্পাপ ঐ খুদে হাফেজ সেটা শুনেই সুরেলা কণ্ঠে তেলাওয়াত শুরু করেন। টিভির সামনে বসা সারা বিশ্বের অগণিত রোজাদার তা শোনেন, দেখেন এবং চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দুই হাত তুলে খুদে হাফেজদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।

মুসলমান সমাজে হাফেজরা খুবই সম্মানিত। কিন্তু আমাদের সমাজে স্থায়ীভাবে কাজ বা চাকরির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য। তাই আল্লাহর মেহমান এই হাফেজদেরকে রমজান উপলক্ষ্যে কিছুটা সম্মান করা উচিত। এমতাবস্থায় পবিত্র ঈদের পূর্বেই হাফেজগণ এ ধরনের একটি আর্থিক সুযোগ পেলে খুবই উপকৃত এবং কৃতার্থ হবে। অতঃপর খুশি মনে শবে কদরের রাতে এবং ঈদের জামায়াত শেষে সব হাফেজ যদি একসঙ্গে দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন—নিশ্চয়ই আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে এবং কবুল হবে তাদের দোয়া। কল্যাণ হবে দেশের এবং দেশের মানুষের। দূর হবে করোনার তাণ্ডব, দূর হবে সকল বালা-মুসিবত ইনশাআল্লাহ। ইত্তেফাক, লেখক- পরিচালক (আইআইটি) এবং তথ্য প্রযুক্তিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়