ড. এমদাদুল হক : প্রিয় আত্মন, ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ গল্পটি জানো নিশ্চয়ই। রাজকুমারের আচরণ ছিলো জন্তুর মতো। তাই অভিশাপে এক কদাকার জন্তুর আকৃতি পেলো সে। শর্ত হলো এই অবস্থায় কোনো নারী যদি তাকে ভালোবেসে বিবাহ করতে সম্মত হয়, তবে সে মুক্ত হবে শাপ থেকে। অভিশাপই প্রেমের পথ তৈরি করে দিলো রাজকুমারের জীবনে। শুরু হলো রূপান্তর। কোমলতা ও উত্তম আচরণের পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠলো সে। সে তার অস্তিত্বকে প্রেমময় করে তুললো। শিখলো প্রেমের নৃত্য। তার নম্র ব্যবহার ও কোমল প্রেমে মুগ্ধ হলো এক সুন্দরী নারী বিউটি।
সম্মতি জানালো বিবাহ প্রস্তাবে। রাজকুমার শাপমুক্ত হলেন। প্রত্যেকের ভেতরেই তৎপর রয়েছে এক কদাকার জন্তু। এই জন্তুটি মানুষ হয়ে গেলেই সৌন্দর্য ও প্রেমের আবির্ভাব ঘটে জীবনে। প্রেমময় অস্তিত্ব থেকে যে কিরণ বিচ্ছুরিত হয় তাই-ই সুন্দর। যে যাকে প্রেম করে সে তার কাছে সুন্দর হয়ে উঠে। বিউটির কাছে যেমন সুন্দর হয়ে উঠেছিলো কদাকার জন্তুটি। গল্পটির তাৎপর্যÑ প্রেম দেওয়ার জন্য সুশ্রী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রেম দেওয়ার জন্য প্রেমময় হওয়া প্রয়োজন। প্রেমের আবির্ভাবে কদাকার জন্তুর মধ্যেও দেখা যায় অমিত সৌন্দর্য। তার মানে প্রেমই সৌন্দর্য। প্রত্যেকেই ব্যস্ত থাকে তাকে যেন আরেকটু সুন্দর দেখায়, যেন তার বাহ্যরূপ দেখে মানুষ আকৃষ্ট হয় এবং তাকে প্রেম করে। কিন্তু আমরা যতোই রূপচর্চা করি না কেন, মানুষ কিন্তু বাহ্যরূপের জন্য ভালোবাসে না। মানুষ ভালোবাসে আমাদের অন্তঃস্থিত রূপের জন্য এবং আমরাও মানুষকে ভালোবাসি তাদের অন্তঃস্থিত রূপের জন্য।
চামড়া কুঁচকে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। প্রেমের জন্য চামড়ার সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো বিনয় ও কোমলতা, উদারতা ও বদান্যতা, সততা ও ধৈর্য। দেহের সৌন্দর্য দেহ স্পর্শ করতে পারে না। সৌন্দর্য দৃশ্য নয়, তাই স্পৃশ্যও নয়। দেহের সৌন্দর্য থেকে যদি মনের সৌন্দর্য প্রাধান্য পায়, তাহলে আত্মার সৌন্দর্য উপলব্ধির পথটি প্রশস্ত হয়। বিউটি উপলব্ধি করেছিলো আত্মার সৌন্দর্য। তাই গল্পটি কালজয়ী হয়ে উঠলো। প্রেম থেকে সৌন্দর্যের জন্ম হয় প্রেমেরই জন্য। আত্মিক সৌন্দর্যের টান অনুভব করি এবং ভেসে যাই সেই টানে অনন্ত প্রেমের দিকে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :