আরিফ রহমান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোট হাজতবাস ৩০৫৩ দিনের। ৫৫ বছরে জীবনে ১৭ বার জেলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের বয়স যদি ২৩ বছর হয় তাহলে এই ২৩ বছরের মধ্যে ১৩ বছরই জেলে কাটিয়েছেন। জীবনে বিভিন্ন কারণে জেলে গেছেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জেলে গেছেন আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে বিস্তর জেল খেটেছেন। এমনকি তাকে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে লোকাল সাম্প্রদায়িক কোন্দলে নেতৃত্ব দানের অভিযোগ মাথায় নিয়ে। দেশদ্রোহিতার মামলায় প্রচুর জেল খেটেছেন, আর সব শেষে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার অপরাধে আনীত রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তো পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল কাটিয়েছেন পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে। আচ্ছা, তিনি জীবনে সবচেয়ে বেশি সময় জেল খেটেছেন কোন কারণে জানেন? জেনে রাখেন, বিসিএস পরীক্ষায় কাজে লেগে যেতে পারে। ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে’।
একটা হচ্ছে আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালে সরকারবিরোধী বক্তৃতা দেওয়া (৭৮৯ দিন) আরেকটা হচ্ছে ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল পাবনা টাউন হল মাঠে সরকারবিরোধী বক্তৃতা দেওয়া (৬১৯ দিন)। প্রথম অভিযোগে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৯ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল পর্যন্ত লাগাতার ৭৮৯ দিন জেল খাটেন। আর দ্বিতীয়বার ৯ মে ১৯৬৬ থেকে ১৭ জানুয়ারি ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত একটানা ৬১৯ দিন জেল খাটেন। প্রথম ঘটনার বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া গেলেও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের ওনার জেল জীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। এই সময়কালে তিনি পাবনা টাউন হল মাঠে সরকারবিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে কারাবন্দি ছিলেন। এই দুটো বছরের সবগুলো ঈদ তার কারাগারে কাটাতে হয়। বড় কন্যা হাসিনা আইএ পরীক্ষা দেয়। পিতা মুজিব বলেন, রেজাল্ট খারাপ হলে আমি কষ্ট পাবো না, তবুও ভালো করে পরীক্ষা দিও। ছেলে রাসেল এখন মাকেই ‘আব্বা’ ডাকা শুরু করেছে অভিমানে। আজকাল জেলে এসে বাবাকে নিয়েও যেতে চায় না সঙ্গে করে।
জীবনে কতো বড় মামলায় জেল খাটলেন বঙ্গবন্ধু অথচ সবচেয়ে বেশি সময় কারাভোগ করলেন সামান্য একটা সরকারবিরোধী বক্তব্যের জের ধরে? কারাগারের রোজনামচায় লিখেছেন : ‘বাংলার মাটির দোষ বোধ হয়। যে বাঙালিরা আমাকে আসামি করছে, আটকাইয়া রাখছে, জেল দিতেছে। তারাও তো এই মাটিরই মানুষ এবং উচ্চ শিক্ষিত। তাদের ছেলেমেয়ে ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যই তো আমি ও আমার মতো শত শত কর্মীরা কারাবরণ করেছি। আর কতো লোকই না জীবন দিলো তারই ভাইয়ের গুলিতে। তারাও একদিন বুঝবে, তবে সময় থাকতে না’। ১০০ বছর বাদে আজ যদি বঙ্গবন্ধুর সামনে তার ওই লেখা হাজির করে বলা হতো, ‘আপনি যেমন সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে লাগাতার ২ বছর একটানা জেল খেটেছেন, যেই দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আপনি দিয়েছিলেন সেই দেশের মানুষজন আজও সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে জেল খাটে। আপনি বলেছিলেন যারা জেলে আটকায় তারা একদিন বুঝবে। তারা আর কবে বুঝবে? কবে সেই সময় আসবে’? এই প্রশ্নের তিনি কি উত্তর দিতেন? তার মাথাটা কী নিচু হয়ে যেতো না? কে বাংলার সবচেয়ে উঁচু মাথাটাকে নিচু করালো? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :